যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন জো বাইডেন। আর তার সহযোগী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। শপথ গ্রহণের দিন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের শুভেচ্ছায় ভাসছেন তারা।
জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইটবার্তায় লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য জো বাইডেনকে এবং ঐতিহাসিক অভিষেকের জন্য কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানাই। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ পর্যন্ত যে বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব অপরিহার্য। আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশায় রয়েছি।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো টুইটে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের দিন জো বাইডেনকে অভিনন্দন। আমাদের দুই দেশ ইতিহাসের বিভিন্ন বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এবং আপনি, কমলা হ্যারিস ও আপনার প্রশাসনের সঙ্গে অংশীদারত্ব চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি প্রত্যাশায় রয়েছি।’
বাইডেন ও কমলাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ লিখেছেন, ‘এমন উল্লেখযোগ্য দিনের জন্য মার্কিন জনগণকে শুভেচ্ছা। আমরা একসঙ্গে রয়েছি। আমাদের সময়ে আসা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা শক্তশালী হব, আমাদের ভবিষ্যৎ গঠনে শক্তিশালী হব, আমাদের বিশ্বকে রক্ষায় আমরা শক্তিশালী হব।’
মোদি টুইটে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য জো বাইডেনকে উষ্ণ অভিনন্দন। আমি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদার করতে তার সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।’
ইমরান খান টুইটবার্তায় লেখেন, ‘অভিষেকের জন্য জো বাইডেনকে আমি অভিনন্দন জানাই। বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক চুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই, জনস্বাস্থ্যের উন্নতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী পাক-মার্কিন অংশীদারত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।’
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ টুইট করেন, ‘আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের প্রশাসন আজ থেকে তাদের যাত্রা শুরু করল। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গণতন্ত্র এবং আরো ন্যায্য, টেকসই ও বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার জন্য কাজ করব।’
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, ‘আজ আয়ারল্যান্ডের একজন প্রকৃত বন্ধু জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। আমি আমাদের দুই মহান দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার অপেক্ষায় আছি।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুজেপে কোন্তে বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের জন্য দারুণ এক দিন। যেটা আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূর পৌঁছে যাচ্ছে।’
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন। জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্ব অত্যন্ত গভীর।’
চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা বলেন, ‘বাইডেন ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিলেন। আমি তার জন্য মঙ্গল কামনা করছি।’
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ‘এখন সময় একই সঙ্গে কাজ করার... যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। আমরা সব সময় সব বিষয়ে একমত হতে পারবো না, কিন্তু আমরা কখনোই সঙ্কটের সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা ছেড়ে দিতে পারি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নেতৃত্ব দেশে শান্তি, সংহতি, পারষ্পরিক বোঝাপড়া, সম্প্রীতির বাতাবরণ ফিরিয়ে আনুক, ঈশ্বরের কাছে সেই কামনা করে বাইডেন ও হ্যারিসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক আরও মজবুত করা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আরবদের শান্তি প্রচেষ্টা আরও এগিয়ে নেওয়ার কামনায় বাইডেন ও হ্যারিসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এদিকে ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্প আমলের অন্যায় নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছে। আর ট্রাম্পের ইসরায়েল ঘেঁষা নীতির কারণে তার বিদায়ে কোনো দুঃখবোধ নেই বলেও জানিয়েছে তারা।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস শপথ নিয়েছেন বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেওরের কাছে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও এনবিসি এ খবর জানিয়েছে।
নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। প্রথা ভেঙে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বিদায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথের আগেই হোয়াইট হাউস ছেড়ে ফ্লোরিডায় পাড়ি জমান তিনি।
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশ। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ট্রাম্প না থাকলেও বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
শপথ নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিভক্তিকে ছাপিয়ে সব সময় ঐক্যের জয় হয়েছে।
এ ছাড়া বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সব মানুষের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র গড়ে তুলতে চান বলেও অঙ্গীকার করেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]