জোবায়ের ফরাজী,বাগেরহাট প্রতিনিধিбদৈনিক শিরোমণিঃ বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহ। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সেখানে ১১টি খাতে প্রায় ৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটের বিভিন্ন সড়কে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ২২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।এ সময় পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ কিলোমিটার, ইট-সলিং বা খোয়ার তৈরি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৫ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। বিভিন্ন স্থানে কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩৫ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার।বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪টি স্থানে নদীর তীর ভেঙেছে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার, বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন ১৫টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তত ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটের ৬ হাজার ১০০টি চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ভেসে গেছে। কাকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৬৫টি। এছাড়া ২০ জেলে নৌকা ও ৩০টি জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইয়াসের তাণ্ডবে। আর্থিক হিসেবে মৎস্য খাতে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।ইয়াসের প্রভাবে বেশকিছু ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি ঘর সম্পূর্ণ ও ৭৫৬টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ঘরের মালিকদের ১ কোটি ৫১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইয়াসে বিভিন্ন গৃহস্থের ৩৮৩টি হাঁস ও ৮৯২টি মুরগি মারা যাওয়ায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০৪ টাকা।শস্যক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হয়ে কৃষি বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৬৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা। বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিদ্যুৎ লাইন ও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ১১হাজার টাকার।এছাড়াও ইয়াসের প্রভাবে জেলার ৯ উপজেলায় ৪৩টি নলকূপ ও ১ হাজার ৭০৫টি টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসেবে এতে এক কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইয়াসে নার্সারিতে পানি ওঠে বন বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি মাদরাসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার।স্বাস্থ্য বিভাগের একটি হাসপাতালের অবকাঠামো আংশিক ক্ষতি হয়েছে। যা মেরামতে ব্যয় হবে এক লক্ষ টাকা।ইয়াসের ফলে সৃষ্ট প্রবল বাতাস ও পানির তোড়ে পূর্ব সুন্দরবনের বেশ কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার), দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। দুটি অফিসের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৬০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ৬ হাজার ১০০টি মৎস্য ঘের ও ৩৬৫টি কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক হিসেবে মৎস্য খাতে ৯ কোটি ৯৬ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য তালিকা করা হচ্ছে।বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪টি স্থানে নদীর তীর ভেঙেছে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার, বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন ১৫টি ব্রিজ-কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে কিছু স্থানের সংস্কার করা হয়েছে।স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মুজিবর রহমান বলেন, “ইয়াসের ফলে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাস্তা ভেঙে কয়েকটি জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়ক মেরামতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে”।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, অবকাঠামো সংস্কার ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য সহযোগিতা দেওয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ৭৫টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় ২ কোটি সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৯টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে শিশুদের জন্য ১ লাখ এবং গোখাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা করে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে”।