দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল এখন নিউজিল্যান্ডে, কিন্তু একের পর এক বোমা ফাটানো খবর বের হচ্ছে দেশ থেকেই। শুরুটা হয়েছিল শনিবার (২০ মার্চ) রাতে সাকিব আল হাসানের এক লাইভ ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে। যা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। সেই রেশ কাটার আগেই এবার বিসিবির কড়া সমালোচনায় মাশরাফি বিন মর্তুজা।
অবসর, বাদ পড়া ইত্যাদি ইস্যুতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন মাশরাফি। পাঁচ পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে ফিটনেস ইস্যুসহ আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
মাশরাফি বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব ছেড়েছেন গত বছরের মার্চে, জিম্বাবুয়ে সিরিজে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়কের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও থমকে আছে সেই থেকে। নেতৃত্ব ছাড়ার সময় জানিয়েছিলেন, দলের সাধারণ একজন হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চান আরো কিছু সময়। গত দুই সিরিজে মাশরাফির সেই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকেছে। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দলে রাখা হয়নি বাংলাদেশের পক্ষে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিককে। তারপর তাকে রেখে নিউজিল্যান্ডের বিমান ধরেছে বাংলাদেশ দল। মাশরাফির দল থেকে বাদ পড়ার বিষয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে ফিটনেসকে কারণ বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেকদিন চুপ থাকার পর মাশরাফি বলছেন ভিন্ন কথা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে মাশরাফির দলে সুযোগ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বিসিবি বস বলেছিলেন, ফিটনেসের কথা চিন্তা করলে ওর (মাশরাফি) বাদ পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, আমার মনে হয়।
এতোদিন কিছু না বললেও এবার ওই কথার কড়া জবাব দিলেন মাশরাফি। বলেছেন, 'পরিসংখ্যান বের করে দেখুন আমার কোনো ফিটনেস পরীক্ষায় ফেল আছে কি না। ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কোনো ফিটনেস পরীক্ষায় আমি ফেল করিনি। বলতে শুনেছি, যে মাশরাফির ফিটনেস হয়তো ভালো নেই। আমি তখন অবাক হয়েছি। কারণ বাইরের একজন দর্শক বললে হয়তো মানতাম, কিন্তু বোর্ডের কেউ যখন বলছে তখন অবাক লাগে। ওনারা কী আসলেই তথ্য জানে? মানে আসলেই কী অফিস করে? গত বিশ বছরে আমার একটা ফিটনেস টেস্টেও ফেল নেই।'
তিনি আরো যোগ করেন, 'ক্রিকেট খেলা শুরুর পর থেকেই আমি বিশ্বাস করি, যখন কেউ আমাকে আক্রমণ করবে, তখন যে দিকটা ছাড় দেয়া হয় সেদিকেই আক্রমণ করবে। তাই আমার যত ইনজুরি হোক, যত যাই হোক, ফিটনেস ইস্যুতে হেলাফেলা করিনি। বোর্ডের কাছে তো সব তথ্য আছে, বের করে দেখতে বলুন। যদি তথ্য না থাকে তাহলে তো এটা আরো বড় অপেশাদারিত্ব।'
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে বলা হয়েছিল, বাদ দেওয়ার আগে মাশরাফির সঙ্গে আলোচনা করেছেন নির্বাচকরা। মাশরাফি বললেন, এটা মিথ্যাচার। তার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি, 'না, এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়নি। নান্নু (মিনহাজুল আবেদীন) ভাই আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু এই বিষয়ে কথা হয়নি। আমি অন্তত কিছুটা সত্য কথা আশা করেছিলাম।'
বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের আগামী বিশ্বকাপের ভাবনায় মাশরাফি নেই। এটিও কি জানানো হয়েছিল তাকে? যেহেতু অবসর নেননি সেহেতু মাশরাফির মতো একজন হঠাৎ দল থেকে বাদ পড়ার আগে আলোচনা আশা করতেই পারেন। হেড কোচ বা টিম ম্যানেজমেন্ট কি আলোচনা করেছিলেন?
মাশরাফি জানালেন, আলোচনা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে সাড়া পাননি তিনি। গত পাকিস্তান সিরিজের আগে হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে বলেছিলেন, দলে রাখা হলে বা না হলে তাকে যেন আগে থেকে একটু জানানো হয়। যাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন। তারপর থেকে ডোমিঙ্গোর সঙ্গে কথাই হয়নি মাশরাফির। তবে ঠিকই দল থেকে ছেটে ফেলা হয়।
সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেন, ‘রাসেল আমাকে এক কাপ কফির দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিরিজের আগে। আমি এখনো অপেক্ষা করছি সেটার। বোর্ডে ডেকেছিলেন আমাকে। আমি তাঁকে বলেছি, তোমার যে পরিকল্পনা, আমাকে বাদ দিলেও জানিও। না বাদ দিলেও জানিও। যেন আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারি। তারপর তার (ডোমিঙ্গো) সঙ্গে আর কথা হয়নি।'
মাশরাফির সাক্ষাৎকার চার পর্বে দেখাবে একাত্তর টিভি। প্রকাশিত হয়েছে একটা পর্ব। ধারণা করা হচ্ছে, পরের তিন পর্বেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]