আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে গেছেন বামপন্থী প্রার্থী গুস্তাভো পেত্রো। দেশটির পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেও বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধির আভাস দেখা যাচ্ছে। ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, হন্ডুরাস, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, পেরু, চিলির পর কলম্বিয়াতেও বামপন্থীরা ক্ষমতায় এলে আমেরিকা মহাদেশে অনেকটাই মিত্রহীন হয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাইমারি ভোটগ্রহণ হয়েছে রোববার। সোমবার পর্যন্ত গণনায় দেখা গেছে, ৫৪ লাখের বেশি ভোটার বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট হিস্টোরিক্যাল প্যাক্টকে ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে চূড়ান্ত নির্বাচনের অনেকটা পথ এগিয়ে গেছেন সিনেটর গুস্তাভো পেত্রো। এছাড়া রক্ষণশীল দলগুলোর জোট টিম কলম্বিয়াকে ভোট দিয়েছেন ৩৯ লাখ ভোটার। এই জোটের মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে জয়ী হয়েছেন রাজধানী মেদেলিন শহরের সাবেক মেয়র ফেদেরিকো গুতিরেজ।
মধ্যপন্থী দলগুলোকে নিয়ে গঠিত অপর জোট হোপ কোয়ালিশন রোববারের প্রাইমারিতে ২০ লাখ ভোট পেয়েছে। এই জোটের প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন দৌড়ে জিতেছেন গণিতবিদ সের্গিও ফাহার্দো। ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
প্রাইমারিতে বিজয়ী তিন প্রার্থী ও ছোট দলগুলোর মনোনীতদের নিয়ে মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ হবে। এতে কোনো প্রার্থী মোট ভোটের ৫০ শতাংশ পেলে বিজয়ী ঘোষিত হবেন। আর প্রার্থীদের কেউ ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হলে জুন মাসে দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ হবে।
প্রাইমারির ফলাফলে দেখা যায়, সাবেক বিদ্রোহী গুস্তাভো পেত্রো ৪০ লাখের বেশি ভোটারের রায় পেয়েছেন, যা প্রধান তিন জোটের অন্য পাঁচ প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট ভোটের চেয়ে বেশি। কলম্বিয়ার সিনেটের বর্তমান সদস্য পেত্রো প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে সরকারি অর্থে জমি কিনে সে জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া তিনি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ভূমি মালিকদের কর বৃদ্ধি করবেন বলে জানিয়েছেন।
রোববার অনুষ্ঠিত কলম্বিয়ান কংগ্রেসের নির্বাচনেও বামপন্থীদের শক্তি সংহত হয়েছে। উচ্চকক্ষ সিনেটের নির্বাচনে শূন্য আসনগুলোর মধ্যে ১৭টি জিতেছেন বামপন্থীরা। এতে করে ১০২ আসনের সিনেটে বৃহত্তম দলে পরিণত হয়েছে পেত্রোর কলম্বিয়া হিউমানা পার্টি। এছাড়া নিম্নকক্ষের শূন্য আসনগুলোর মধ্যে ২৫টি জিতে সেখানে দ্বিতীয় শক্তিধর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বামপন্থীরা।
কলম্বিয়ায় বামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে পুরো আমেরিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্র মিত্রহীন হয়ে পড়বে বলা যায়। এর আগে নভেম্বর মাসে হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজনীতিবোদ্ধাদের চমকে দেন বামপন্থী প্রার্থী জিয়াওমারা কাস্ত্রো। এতে করে মধ্য আমেরিকার দেশটিতে রক্ষণশীল ন্যাশনাল পার্টির এক যুগের শাসনের অবসান ঘটে।
এরপর ডিসেম্বরে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন সাবেক ছাত্র নেতা ও বামপন্থী তরুণ রাজনীতিক গ্যাব্রিয়েল বরিচ। রোববার তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে গত এপ্রিলে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন সাবেক স্কুল শিক্ষক পেদ্রো কাস্তিলো। পেরুর সাবেক একনায়ক আলবার্তো ফুজিমোরির মেয়ে কিকো ফুজিমোরিকে বিপূল ভোটে পরাজিত করেন একেবারেই গ্রামীন জনপদের মানুষ কাস্তিলো। পেরুর আগে মেক্সিকোতে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন হন বামপন্থী রাজনীতিক ও মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র আন্দ্রেজ মানুয়েল লোপেজ ওবরাদর।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুস্তাভো পেদ্রো চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হলে আমেরিকা ও লাতিন অঞ্চলে ব্রাজিল হবে একমাত্র দেশ যেখানে পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থায় বিশ্বাসী কোনো প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাসীন রয়েছেন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকল্প কোনো চিন্তাকে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বৈরী চোখে দেখে থাকে, তাই বলা যায়- যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে তাদের মিত্র সংখ্যা ক্রমশ কমছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হেয়ার বোলসেনারো দিন দিন যেভাবে অজনপ্রিয় হয়ে উঠছেন, তাতে আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দো সিলভা আবারো জয়ী হবেন বলে জোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, বাজার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আগামী বছর নাগাদ সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অনুসারী কিছু দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়বে।