প্রিন্স আরিফ খান, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি: মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী ইউনিয়নে স্বল্পমূল্যের টিসিবির কার্ড জালিয়াত চক্রের হাতে। জেলা প্রশাসন থেকে ইউনিয়নে প্রথমে ১৩০০টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। করোনাকালীন সময়ে যারা প্রণোদনাভাতা পেয়েছিলেন সেই ১৩০০ জনকে টিসিবি কার্ড দেওয়া হয়। পরে নতুন করে আরো ২০৩টি কার্ডের বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সময়ে নবগঠিত বারাদী ইউনিয়নের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আপিল উদ্দিন। তাঁর স্বাক্ষরে ওই কার্ডগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর স্বাক্ষরযুক্ত সিলমোহর জাল করে প্রায় দ্বিগুণ কার্ড তৈরি করেছে একটি জালিয়াতি চক্র। কিছু কার্ডে কোনও সিল দেখা মেলেনি। যারা ওই কার্ডগুলো নিয়ে পন্য নিতে আসছেন তারা নিজেরাও কার্ডের মালিক নন।
গতকাল বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসে বারাদী ইউনিয়নে টিসিবি পন্য দেওয়ার পর কার্ড নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এমন খবরের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে বারাদী ইউনিয়নে টিসিবি পন্য বিতরণ সরেজমিনে খোজ নেওয়া হয়। খোঁজ নিতে গিয়ে মেলে ভিন্ন অবস্থা। প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ কার্ড হাতে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছেন পন্য নিতে। সকলের মুখে মুখে এক কথা কার্ডগুলো নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি কার্ডগুলো নিয়ে নিচ্ছেন।
কথা হয় চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি রুহুল আমিনের সাথে। তিনি কার্ড নেওয়ার কথা স্বীকার করে কার্ড সংরক্ষন করা বক্সটি তুলে দেখিয়ে বলেন। এখানে যারা পন্য নিতে এসেছেন এদের মধ্যে অনেকে আমঝুপি, পিরোজপুর ইউনিয়ন ও চুয়াডাঙ্গার কুলপালা গ্রামের বাসিন্দাও এই ইউনিয়নের কার্ড নিয়ে পন্য নিতে এসেছেন। আবার অনেক কার্ডে কোন স্বাক্ষর নেই সিল কিছু নেই। ফলে নির্দিষ্ট পন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মানুষের ভিড় কমছে না। এর আগে যারা পন্য দিতেন তারা এসব কার্ডেই পন্য দিয়েছেন। ফলে বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে।
বারাদী ইউনিয়নের টিসিবি ডিলার নাজবুল হোসেন বলেন, এই ইউনিয়নের পণ্য দিতে এসে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ এর থেকেও অনেক পরিমাণ মানুষ এসে পণ্য নিতে আসেন বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে জানালে তারা এবার কার্ডগুলো জমা নিচ্ছেন।
ইউনিয়নের শিমুল তলা গ্রামে ফজলুল হকের স্ত্রী সাহারবানুসহ তার দুই ছেলে আবুল কালাম ও জামাল হোসেনের ৩টি কার্ড নিয়ে এসেছিলেন টিসিবি পণ্য নিতে। সাহারবানু বলেন, প্রতিবার পন্য দেওয়ার পর কার্ড ফেরত দেয়। কিন্তু এবার চেয়ারম্যানের নাম করা ওরা কার্ডগুলো নিয়ে নিলো বললো কি ভুল হয়েছে পরে ঠিক করে দেবে।
কথা হয় পন্য নিতে আসা প্রায় জনা দশেক কার্ডধারী মানুষের সাথে। তারাও অভিন্ন অভিযোগ তোলেন। ইউনিয়নের ৮ নম্বর সদস্য জাকির হোসেন লিটন বলেন, ইউনিয়নের ১৩০০ কার্ড হওয়ার কথা কিন্তু নকল করে ২৬০০ কার্ড বানানো হয়েছে। যার ফলে দ্বিগুন লোক আসছে পণ্য নিতে। দেখা যাচ্ছে আসল কার্ডধারীরা পন্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যে কারণে চেয়ারম্যান সাহেব কার্ডগুলো নিয়ে নিচ্ছেন। তবে তালিকা আছে কিনা চেয়ারম্যান বলতে পারবে।
বারাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন নবগঠিত ভাড়াটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আপিল উদ্দিন। ওই সময় শিবির কার্ড গুলো তৈরি করা হয়েছে। উনার স্বাক্ষর সিলমোহর যুক্ত সিল তৈরি করে হয়তো অনেক শিক্ষক এবং কম্পিউটার দোকানদাররা জাল কার্ড তৈরি করে দিয়েছেন। যার ফলে ১৩শ কার্ডের স্থলে আড়াইহাজারের অধিক কার্ড হয়েছে। ফলে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গতবার টিসিবির কার্ড দেওয়ার সময়ও একই ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ধরনের ভোগান্তি এড়াতে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেছি। উনি বলেছেন একটি উপায় বের করতে। তাই আমরা এবার কার্ডগুলো জমা নিচ্ছি এবং এই কার্ডগুলোর মধ্য থেকে সুষ্ঠুভাবে ১৩০০ কার্ড তৈরি করা হবে যাতে করে এই ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষ রেহাই পায়। আপনারা সাংবাদিক হিসেবেও এ কাজে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন।
তিনি আরো বলেন শুধু বারাদি ইউনিয়নের নয় নয় পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর ইউনিয়ন, আমঝুপি ইউনিয়ন এমনকি চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকেও নকল কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য নেওয়ার সুবিধা নিচ্ছেন কিছু দুষ্ট চক্র। ফলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার সঠিক মানুষগুলো টিসিবি পন্য থেকে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, রমযান উপলক্ষে টিসিবি কার্ডধারীরা এক কেজি ছোলা, এক কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল এবং ২ লিটার সয়াবিন তেল নিতে পারছেন ৪৭০ টাকায়।