উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে সরকার গঠন করেছিল।
বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্দলীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসাবে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম প্রস্তাব করে আওয়ামী লীগ।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ।
সেই সময় রাষ্ট্রপতিই ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তবে ৬ই অগাস্ট সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া হয়।
উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের জুলাইয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ। কিন্তু পরবর্তীতে নানা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা যায়।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জননিরাপত্তা আইন নামের একটি বিতর্কিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানান।
কারণে তাঁর সাথে তৎকালীন সরকার এবং আওয়ামী লীগের তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই সম্পর্কে আর উন্নতি হয়নি।
সেই সময় জননিরাপত্তা আইন বিল আকারে সংসদে তোলা হয়। সেখানে কোন অভিযুক্তকে জামিন দেয়া যাবেনা সহ আরও কয়েকটি কঠোর বিধান ছিল। ফলে আইনটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
কিন্তু সংসদে সেটিকে অর্থবিল হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, অর্থবিল রাষ্ট্রপতির সামনে স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করা হলে রাষ্ট্রপতি কোন মতামত বা অসম্মতি জানাতে পারেন না।
কিন্তু পরে যখন এ নিয়ে সরকারি দল বলতে শুরু করে যে, রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করেছেন, তখন সাহাবুদ্দিন আহমেদ একটি বিবৃতিতে জানন, অর্থবিল হিসাবে তার সামনে উত্থাপন করায় সাংবিধানিকভাবে এতে স্বাক্ষর না করে তার কোনো উপায় ছিল না।
দুই হাজার ষোল সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারি প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে চাওয়ায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি।
“উনি নিজেকে যতদূর সম্ভব সরকারি বাধা-নিষেধের প্রভাব মুক্ত করে কিছু কথা বলেছিলেন, দেশের কল্যাণের জন্য। এই ধরণের কথা তিনি বলেছিলেন এবং কাজ তিনি করেছিলেন,তাতে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিছুটা রূষ্টই হয়েছিল,” বলেছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দূরত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, একসময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতি চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন, সেই স্বাধীনতা তার আছে।
দুই হাজার একুশ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ার পর দলটির নেতারা সাহাবুদ্দিন আহমদের ওপরেও দায় চাপিয়েছিলেন।
দুই হাজার দুই সালের চৌঠা জানুয়ারি একটি প্রতিবাদ লিপিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ লিখেছিলেন, ‘’আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জেতানোর মুচলেখা দিয়ে আমি রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করিনি ….তাদের সব কথা শুনলে আমি ফেরেশতা, নইলে আমি শয়তান। … হেরে যাওয়ার পর তারা আমাকে নির্বাচন বাতিল করে রাষ্ট্রপতির অধীনে পুনরায় নির্বাচন করার অনুরোধ করেন। আমি তাতে রাজি হইনি”।