দৈনিক শিরোমণি ডেস্ক রিপোর্ট : ১৯২১ সালের ১ জুলাই সাংহাইতে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিশ্বের অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক দল এটি। বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮২ মিলিয়ন। রাজতন্ত্রের পাষণ্ডতা ও বর্বরতা, ধনতন্ত্র, পুঁজিবাদ, কলোনিতন্ত্রের উৎপাত, সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল গুয়ামিন দং বা জাতীয়তাবাদী দলের অসহায় অবস্থার কারণে সিপিসি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। চীন বহু পুরনো সভ্যতা, অনেক রাজা চীনে বংশানুক্রমে রাজত্ব করেছেন। শেষ দুই শ’ বছরে বিদেশী আক্রমণকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় চীন।
আধুনিক সময়ে দেং জিয়াও পিং ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের আমলে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ‘ইকোনমিক শক্তি’তে পরিণত হয়েছে। শত বছরে সিপিসি অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ধাপে ধাপে অগ্রগতি করেছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে পড়া, গর্ভাচেভের প্রশ্নবোধক নোবেল শান্তিপদক প্রাপ্তি, কমিউনিজম বা সোসিয়ালিজম বা মার্কসবাদের শুয়ে পড়া অবস্থাও চীনের উত্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। পূর্ব ইউরোপেও অনেক কমিউনিস্ট পার্টি বা সোসিয়ালিস্ট পার্টি ভেঙে পড়েছে। মার্কসবাদের করুণ পরিণতি, খোদ রাশিয়ায় লেনিনের মূর্তি ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলায় মানুষের প্রতিবাদকে গণতান্ত্রিক পশ্চিমারা প্রচার করেছে এসব ‘ফালতু’ মতবাদ টিকে থাকে না। তবুও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি খুব ভালো করতে লাগল, চীনকে বিশ্বের দ্বিতীয় ইকোনমিক ক্ষমতাধর শক্তিতে নিয়ে এলো। চীনের মহীরুহ হয়ে গড়ে ওঠায় সিপিসির ভূমিকা এখন আর কেউ অবমূল্যায়ন করতে পারছে না। চীনকে বিখণ্ডিত করার চেষ্টা করা হলেও রাশিয়া ও গর্ভাচেভের মতো কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। অনেকে প্রশ্ন রাখবেন, চীনে মার্কসবাদের কী অবস্থা হলো! চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে পার্থক্য কী? পার্থক্য তো অনেক, নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা ও ইন্টিগ্রিটি ও ভিন্ন পটভূমি। রাশিয়া শিল্পপ্রধান সমাজব্যবস্থা, শ্রমিকরা শিল্প-কারখানায় পারদর্শী; লেনিন মাকর্সবাদকে রাশিয়ান শিল্পবিপ্লবের সাথে সহমর্মী করে তুলেছিলেন।
অপর দিকে চীন কৃষিপ্রধান দেশ ও চীনা বিপ্লবের সাথে চাষি ও কৃষিসম্পদের সাথে যারা জড়িত তারা বেশি সংযুক্ত। মাও দে জুং নিজেই এক কৃষক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি তার চিন্তাভাবনা ও মাকর্সবাদকে চীনা সমাজের সাথে সম্পৃক্ত করে তৈরি করেছিলেন। দেং জিয়াও পিং অর্থনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠা করে চীনকে বিশ্বে উন্মুক্ত করার প্রয়াস পান। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সিপিসিকে বর্তমান উদ্ভূত ভূরাজনৈতিক সমস্যার আলোকে ‘রিফর্ম’ করার প্রয়াস পান।