নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বিদ্যালয়ে শিশুসুলভ শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেলাভিত্তিক প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞদের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পিটিআইয়ে কর্মরত একাধিক প্রশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশিক্ষকরা এক বিষয়ের ওপর অনার্স-মাস্টার্স করলেও তাদের অন্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স করা একজন প্রশিক্ষক ক্লাস নেন ইংরেজি বিষয়ে। আবার ইংরেজিতে অনার্স পাস একজন প্রশিক্ষককে ক্লাস নিতে হয় গণিতের। মূলত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাবে এই প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে ধারণা তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা জেলা পিটিআইয়ের একজন সিনিয়র প্রশিক্ষক জানান, আমি বাংলা থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমাকে গণিতের ক্লাস নিতে হয়। আসলে পরিস্থিতির শিকার হয়ে ক্লাস নিতে হয়।
মঞ্জুরুল ইসলাম নামের এক প্রশিক্ষক জানান, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ থাকলে তিনি তার অর্জিত জ্ঞান ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারেন। এবং যে সসব শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন তাদেরও সেটি কাজে লাগে। এক্ষেত্রে আসলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের বিকল্প নেই।
জানা গেছে, বাংলাদেশে পঞ্চাশের দশক থেকে প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পিটিআইয়ে শিক্ষকদের জন্য এক বছর মেয়াদি কোর্স চালু করা হয়। এই কোর্সটি ‘সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন’ বলে পরিচিত। এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড) কোর্সটি পরিবর্তন করে ১৮ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) প্রর্বতন করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
এসব ইনস্টিটিউটে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি সামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘পিটিআইগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিলে সহকারী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মান বাড়বে। অর্জিত প্রশিক্ষণ ক্লাসে গিয়ে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এম মনজুর আলম বলেন, পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় ক্লাস শিক্ষকরা সঠিক প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না। এ কারণে বিদ্যালয়ে শিশুসুলভ শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে শিশুবান্ধব শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে চাই। এ কারণে দেশের সব পিটিআইয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি বাস্তবায়ন করতে আমরা দ্রুত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করব। সেটি অনুমোদন হলে নতুনভাবে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ করে পিটিআইগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সূত্রমতে, সারাদেশে মোট পিটিআই ৬৭টি। বগুড়া, চট্টগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুটি করে রয়েছে। পিটিআই স্কুল রয়েছে ৬৬টি।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]