রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || মঙ্গলবার | ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
জেমস রহিম রানা, যশোর : দেশের সব থেকে বড় ও প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন দিয়ে ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাতায়াত বন্ধ থাকায় শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
ভারতীয় হাইকমিশনারের একাধিক কর্মকর্তা ও ভারতীয় ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নতুন ধরনের অমিক্রণ করোনাভাইরাসের দুদার্ণ্ড দাপটের কারণে সে দেশের সরকার স্থল বন্দর দিয়ে ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে ভ্রমণ ভিসায় বিমান বন্দরে দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় হাইকমিশনারের একাধিক কর্মকর্তা।
বহিরাগমন পাসপোর্ট যাত্রীদের আন্তর্জাতিকে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করার সময়ে দেশের প্রতিটি যাত্রীকে দিতে হয় ৫০০ টাকা ভ্রমণ ফি এবং বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল অতিক্রম করার সময় দিতে হয় আরো ৪৮ টাকা। প্রথমে করোনার কারণে ভারত সরকার গত ২০২০ সালের ১৩ মার্চ থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীদের ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে করে যাত্রী যাতায়াত আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে আসে। এরপর আবার চার মাস পর শর্ত সাপেক্ষে গত ১৫ আগস্ট থেকে কূটনীতিক, অফিশিয়াল, জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসাধারীদের যাতায়াতে সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আকাশপথে ভ্রমণ পিপাসুরা যাতায়াত করতে পারলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে দেখা যায়, গত ২০২১ সালে বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২২৩ জন পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে আগমন করেছেন। এসব পাশের যাত্রী বহির্গমন এর জন্য ভ্রমণ ট্যাক্স বাবদ সরকার পেয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এসময়ের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে যাত্রী দেশে ফিরেছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৭১৪জন, বিদেশি যাত্রী এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে দেশে আগমন করেছেন ২৭ হাজার ১০৪ জন, বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে বিদেশি যাত্রী ভারতে ভ্রমণ করেছেন ৩১ হাজার ১১৬ জন।
২০২০ সালে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫০০ জন দেশী-বিদেশী পাসপোর্টধারী যাত্রী এ পথ দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করেছে। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
২০১৯ সালে এ আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৯০০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছে। এর বিপরীতে ভ্রমণ ফ্রি বাবদ রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০- ২০২১ সালে পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে যাতায়াত কমেছে প্রায় ২০ লাখ। আর এই গত দু’বছরে করোনা মহামারীর কারণে বন্দরে শুধুমাত্র পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে গমনাগমনে বিধি নিষেধ আরোপ করায় ভ্রমণ টেক্স থেকে সরকারের রাজস্ব কমেছে অন্তত শত কোটি টাকা।
নড়াইলের সিংগাশোলপুর গ্রামের পাসপোর্ট যাত্রী রিমা বেগম (পাসপোর্ট নাম্বার: এ ০০৯১২০৮৫), ঊষা রানী বালা (পাসপোর্ট নম্বর: ইবি ৫৮৭১৯৯) সীমা রানী বালাসহ একাধিক যাত্রী জানান, আমরা গত এক মাস আগে ভারতে যাওয়ার জন্য বেনাপোল ইমিগ্রেশন এসেছিলাম। আমাদের পরিবারের লোকজনকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নেয়ার জন্য ইমিগ্রেশনে আসার পর জানতে পারি ভ্রমণ ভিসা ভারতে যাওয়া যাবেনা। তাই নিরুপায় হয়ে এখান থেকে ফিরে যাই বাড়িতে। বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে আমাদের জানিয়ে দেয় ভ্রমণ ভিসায় বিমানে করে কলকাতায় যাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের বিমানে যাওয়ার সামর্থ্য না থাকার কারণে আমরা আর ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে পারিনি। যে কারণে ভিস গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আরও জানায় এই সমস্যা শুধু আমাদের তাদের নয়। তাদের মত অনেকেই বেনাপোল ইমিগ্রেশন এসে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের মনিটরিং অফিসার মেজবাউল হাসানের কাছে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারত ফেরত সন্দেহভাজনদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত দুই মাসে ১৪০ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করার পর ৯জনের করোনা ভাইরাসের পজিটিভ এসেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভারতে অবস্থানকালেও করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। আক্রান্তদের যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে স্থল বন্দর দিয়ে বিধি নিষেধ প্রদান করায় এ বন্দর দিয়ে ভারতের যাত্রী যাতায়াত ৮০ শতাংশ কমে গেছে। তবে ভারতীয় সরকার তাদের বিধিনিষেধ তুলে নিলে এ বন্দর দিয়ে আবারও যাত্রী যাতায়াত স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাজু বলেন, আমি বেনাপোল ইমিগ্রেশন এসেছি কয়েক মাস হলো। আসার পরে দেখছি প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ লোক ভারতে গমন করছে। ভারত থেকে আসছে সমপরিমাণ লোক। তবে করোনা মহামারীর আগে এ পথে প্রতিদিন ৫-৭ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে যাতায়াত করতেন শুনেছি। বেনাপোল থেকে কলকাতা শহর খুব কাছে হওয়ায় বাংলাদেশের অধিকাংশ পাসপোর্ট যাত্রীর বেনাপোল দিয়ে যাতায়াত করতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে ভারতীয় সরকারের ভারতে প্রবেশের শর্তারোপ করায় এ পথে যাত্রী যাতায়াত আশঙ্কা হারে কমেছে। যে কারণে সরকারের রাজস্ব আয় ও কমে গেছে বহুগণে।
ভারতীয় ভিসা অ্যাপ্লিকেশন যশোর ভিসা সেন্টারের সুপারভাইজার বিপ্লব কুমার সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব ধরনের ভিসা চালু রয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষে টুরিস্ট ভিসা চালু আছে। বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন হয়ে মেডিকেল ভিসা, বিজনেস ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা প্রাপ্ত যাত্রীরা ভারত যাতায়াত করতে পারবেন। শুধু মাত্র টুরিস্ট ভিসা ব্যবহারকারীরা বিমান যোগে ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে যদি কেউ আগে টুরিস্ট ভিসা পেয়ে থাকার পরেও তারা বেনাপোল ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে ভারতে যেতে পারছে না তাদের জন্য ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনার বরাবর একটি ইমেইলে ( Email: visa
[email protected]) ব্যবহার করে আবেদন পাঠালে হাইকমিশন থেকে অনুমতি পত্র দিলে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে এবং বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসতে পারবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।