রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
ভবদহের কথকতা
জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ
রাস্তা দিয়ে নৌকা চলে নদীতে নাই জল,খেলার মাঠে মাছ ধরে সব ভাসে শেওলা দল।বলতে পার গল্প এসব কেমন করে হয়? নদীর বুকে গরু চরে পথে নৌকা বায় !হ্যা-রে ভাই ! সত্যি এসব দেখতে যদি চাও-বাংলাদেশে যশোর জেলার ছিয়ানব্বই যাও।দেখবে সেথায় মানুষগুলো আধেক মরে গেছে সব হারিয়ে শুন্যপ্রাণে কেবল বেঁচে আছে।স্রোতের ভাঙন, বন্যা প্লাবন সেসব কিছু নয় বৃষ্টির জল জমে জমে ঘট্ ছে বিপর্যয়।পলিমাটির উজান স্রোতে ভবদহের বুক ভরাট হয়ে নিল কেড়ে ছিয়ানব্বর সুখ।নদীতে তাই সবুজ ডাঙা গরু বাছুর চরে,বর্ষা এলে কোমর জল হয় চলার পথের পরে।জল সরেনা সাতাশ বিলের মাঠের ফসল নাই গাছ গাছালি উজাড় হলো দেনার দায়ে তাই।গবাদিসব পশুগুলো হাড় চামড়া সার জলের দামে বেচতো হলো রাখবে কোথায় অার ?দুমুঠো ভাত, গরুর খাবার পানের শুদ্ধ জল অভাব সবি, নাইকো জাগি একটি টিউবয়েল।বুকটা সমান ডুবে অাছে কোথাও পানির নীচে,সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাতে হয় তুলসী পিড়ি সেঁচে।শিশুর মুখে বাড়তি খাবার একটু গরুর দুধ কে জোগাবে, কোথায় পাবে?নেই সে সুযোগটুক।কেউ বেচে খায় শাপলা শালুক কেউবা শামুক খোটে-বস্তা টেনে কেউ খেটে খায় নওয়াপাড়ার ঘাটে।মাছ ধরা এক দৈন্দিন পেশা বউ বেটাতে মিলে সারাটা রাত বশা ফেলে কাটাতে হয় বিলে।পুষ্টিহীনা মায়ের কোলে রুগ্ন ছেলে কাঁদে পেটে যে তার রয়ে গেছে আজন্মের খিদে।মেটেনা তার পেটের ক্ষুধা শুকনো বক্ষ চুষে,ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মায়ের বক্ষদেশে।চালের গুড়ো গুলে তাহার হতভাগ্য মা বুকের দুধের অভাব মিটায়,তৃষ্ণা মিটেনা।পাখীর কুজন যায়না শোনা বাড়ির আঙিনায় এ যেন কোন বিরান ভূমি শ্যামল শোভা নাই।স্বাস্থ্যহীন ঐ কুকুরগুলো দল বাধিয়া চলে ক্ষুধার লাগি মাছ ধরে খায় ঝাপ মারিয়া জলে।বাশের সাঁকো প্রতিবাড়ি খাটের পায়া জলে মাচা বেধে কেউবা থাকে পলিথিনের তলে।তালের ডোঙা আছে বাধা ঘরের খুটি সাথে যোগাযোগের একটা বাহন দিবস, মধ্য রাতে।শিশুর মাজায় অাচল বেধে ঘুমায় রাতে মা চমকে উঠে থেকে থেকে ঘুমতো আসে না।এই বুঝি তার কোলের ছেলে পড়লো না কি জলে থেকে থেকে চমকে উঠে মাছে পাখাল দিলে।বৃদ্ধ, শিশু এক বিছানায় কাটায় রাত্রিদিন জন্ম -মৃত্যু খাটের পরে দুঃখ সীমাহীন।প্রসব ব্যথায় কাতর মাতা সেইসে খাটের পরে,বৃদ্ধ শ্বশুর শুয়ে আছে যাহার একটি ধারে।রান্না বান্না এক খাটেতে পূঁজা-ভেলার পর, শ্রাদ্ধ -বিয়ে স্কুল ছাদে উপায় কি বা আর। খেজুরভাঙা হয়না হেথায়,রথযাত্রার মেলা পোষ পাবনে পিঠা-পুলি সখের যাত্রাপালা।বিদ্যাদেবীর মন উচাটন লক্ষ্মী তাহার সাথে,বাস্তদেবীর চোখ ভরা জল-উঠতে হবে পথে।সাপের কামড়, পোকা মাকড় করোনার নেই ভয়,মরণ দিয়ে মরনভীতি কর্ ছে এরা জয়।শুন্য গোয়াল, দেবমন্দির দেবতা সেই সাথে-নিত্যপূঁজার কাঁসর ঘন্টা নিথর হয়ে গেছে।শ্মশান ঘাটে উঠেছে জল বিদ্যালয়ের দ্বার আধেক বছর বন্ধ থাকে দেখবে কেবা আর? পদ্মা নদীর উপর দিয়ে রেলগাড়ি যায় চলে,আমরা কি সব ভাসবো জলে ছিয়ানব্বই বলে ?এই পরিবেশ আর ক'বছর থাকলে বহমান,কালের খাতায় রইবে শুধু ছিয়ানব্বর নাম।স্তব্ধ হবে এই জনপদ উজাড় হবে গাঁ পেটের দায়ে ছাড়তে হবে জন্মভূমির মায়া।এরই মধ্যে কয়েক হাজার গিয়েছে দেশ ছেড়ে বাকীরা সেই পথ ধরেছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।কতরাজা এলো গেলো প্রতিশ্রুতি সার-ভবদহ তেমনি আছে হয়নি সংস্কার।(ছিয়ানব্বই, এক বর্ধিষ্ণু জনপদের নাম।বাংলাদেশের যশোর- খুলনা জেলার সীমান্তবর্তী পাশাপাশি ৯৬ টি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম মিলে এই জনপদের ধারণা প্রতিষ্ঠিত । শিক্ষা সংস্কৃতির অগ্রগতির জন্য দেশ বিদেশের অনেকের কাছেও ছিয়ানব্বই নামটি খুবই পরিচিত। বিগত১৯৮৮ সাল থেকে কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় এই বিস্তৃত এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করে যাচ্ছে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.