ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে এক প্রকার ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হচ্ছে মিউকোরমাইকোসিস। ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামে পরিচিত বিরল কিন্তু বিপজ্জনক এ সংক্রমণ।
মূলত ভারতের গুজরাট, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ দেখা গেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ব্যাঙ্গালুরুতেও। এ ছাড়া হায়দরাবাদ, পুনেসহ আরও কয়েকটি শহরে এই সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। কোভিড থেকে আরোগ্যের পথে বা সুস্থ হয়ে ওঠাদের শরীরে বিরল ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’এর সংক্রমণ ঘটছে।
চিকিৎসকরা বলছেন মিউকোরমাইকোসিস থেকে মৃত্যুর আশংকা ৫০%। তাদের ধারণা স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে। কোভিড-১৯এ গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের জীবন বাঁচাতে এখন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এই স্টেরয়েডের ব্যবহার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি ডায়াবেটিস নেই এমন কোভিড আক্রান্তদের শরীরের রক্তে শর্করার (ব্লাড সুগার) মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়।
ডা. রণদীপ গুলেরিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, করোনার কারণে মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে। সে কারণেই নানা রকম ফাঙ্গাল ও ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের শরীরে এই সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা আরও বেশি। তার ওপর টানা স্টেরয়েড শরীরে প্রবেশ করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সে কারণেই এ ধরনের ফাঙ্গাল সংক্রমণ তৈরি হচ্ছে।
ডা. নায়ার জানান, এই ছত্রাক মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ ঘটছে। মুম্বাইয়ের সিয়ন হাসপাতালে গত দুই মাসে এই ভয়ঙ্কর ছত্রাক সংক্রমণের ২৪টি কেসের কথা জানা গেছে। ঐ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান ডা. রেণুকা ব্র্যাডু জানিয়েছেন, এর আগে এই কালো ছত্রাক সংক্রমণ বা মিউকোরমাইকোসিসের শিকার হওয়া রোগীর সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল বছরে ছয়টি। এখন প্রতি সপ্তাহে দুটি থেকে তিনটি কেস পাচ্ছেন তারা।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের সাধারণ উপসর্গগুলো হচ্ছে :- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক থেকে রক্ত পড়া, চোখে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়া।
মুম্বাইয়ের ডায়াবেটিসের চিকিৎসক ডা. রাহুল বক্সি বলেন, এই ছত্রাক সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব কোভিড-১৯এর রোগীর চিকিৎসার সময় এবং তার সুস্থ হয়ে ওঠার সময় যদি নিশ্চিত করা যায় তাকে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড দেয়া হচ্ছে।
ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এই ছত্রাক সংক্রমণ যদিও সেভাবে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছায়নি, কিন্তু ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কেন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তার কারণ এখনও সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]