রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
রাশেদুল হাসান নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : পিত্তথলিতে পাথর অপারেশনের জন্য বিকেলে ভর্তি করিয়েছিলাম। সাড়ে ৫টায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো। মনিটরে সম্পূর্ণ অপারেশনের অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখা গেলো। অপারেশনের পর বেডে নেয়ার ৫০ মিনিটের মধ্যেই মা মারা গেলো। ওরা ভুল অপারেশন করে পেটের নাড়ি কেটে আমার মা’কে মেরে ফেলেছে। আমি ওই ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের নায্য বিচার চাই।
সোমবার (০৫ জুন) রাত ১২টার দিকে শহরের চকদেব ডাক্তারপাড়া মহল্লায় মায়ের লাশের পাশে
দাঁড়িয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মিলি বেগমের ছোট ছেলে ঢাকার তেঁজগাও কলেজের
অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তায়েব হাসান। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে তার মা মিলি বেগম (৪৮) এর পিত্তথলির অপারেশন করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকার।
নিহতের পরিবারে সদস্যদের অভিযোগ, শহরের চকদেক ডাক্তারপড়া মহল্লার সিরাজুল ইসলাম
বাবুর স্ত্রী মিলি বেগম সবল ছিলেন। তার ডায়াবেটিকসহ অন্যান্য জটিল রোগ কখনোই
ছিলো না। দীর্ঘ ১ মাস আগে থেকে শারিরিক অসুস্থতাবোধ থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকারের কাছে যান তিনি। ওই সময় পরীক্ষা নীরিক্ষায় মিলি বেগমের পিত্তথলিতে পাথর আছে বলে জানানো হয়। সেটার অপারেশনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ২০৩ নম্বর বেডে সোমবার (০৫ জুন) বিকেল ৫টার দিকে ভর্তি হোন মিলি বেগম। এরপর সাড়ে ৫টায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে চিকিৎসক ভুলবশত তার পেটের বেশ কয়েকটি নাড়ি কেটে ফেলেন। এতে মিলির শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর পরিবারের
সদস্যরা মিলি বেগমের মৃত্যুর কারন জানতে চাইলে তা সুষ্পষ্টভাবে না জানিয়ে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকার। এরপর ক্লিনিকের পরিচালক এনামুল হক বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ক্লিনিকটি ঘেরাও করেন। পরে রাত ১১টার দিকে ক্লিনিক থেকে এনামুল হককে উদ্ধার করে সরিয়ে নেয় পুলিশ।
মিলি বেগমের ভাতিজা আশফাকুর রহমান বলেন, চাচীর মৃত্যুর খবরটি পাওয়ার পরই ক্লিনিকে ছুটে গেছিলাম। ওই ক্লিনিকে এর আগেও অনেক মানুষকে ভুল অপারেশনে মরতে দেখেছি।
এরপরেও ক্লিনিক বন্ধ হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবেই এসব ক্লিনিকে প্রতিনিয়ত মানুষ ভুল অপারেশনে প্রাণ হারাচ্ছে। ক্লিনিকটি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মিলি বেগমের বড় ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, মা’কে দাফনের পর থেকে আমরা শোকে কাতর অবস্থায় আছি। ওটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, হত্যাকান্ড। ডাঃ বারী এবং ক্লিনিক মালিক এনামুলের বিরুদ্ধে শীঘ্রই মামলা করার প্রস্ততি নিচ্ছি। বিভিন্ন প্রভাবশালীদের দিয়ে আমাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। মা’য়ের মৃত্যুর পর মোটা অংকের টাকায় সমঝোতার জন্য লোভ
দেখিয়েছিলো। আমার মায়ের মতো আর কারোর মা যাতে ভুল অপারেশনে মারা না যায় সেজন্য ক্লিনিকটি সিলগালা না করা পর্যন্ত আমরা লড়াই করে যাবো।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল বারী খন্দকার বলেন,
অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে রোগীর সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো। অপারেশন শুরুর পর শুরু থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া ডিসপ্লেতে দেখানো হয়েছে। এরপর তাকে বেডে নেয়া হলে সম্ভবত হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। ভুল অপারেশনে মৃত্যুর অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তীহীন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক বলেন, মিলি বেগমের অপারেশন অভিজ্ঞ সার্জন দিয়েই করানো হয়েছে। সেটা ঠিক না ভুল আমি বলতে পারবো না। রোগীর মৃত্যুটি স্বাভাবিক ছিলো। মৃত্যুর পর সমঝোতার চেষ্টার অভিযোগটি সঠিক নয়।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, বলাকা ক্লিনিকে রাতে একটা হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছিলো। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ভুল অপারেশনে রোগী মৃত্যুর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি।
অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, শহরের কোন ক্লিনিকে অপারেশনের সময় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমনটি জানা ছিলো না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।