নড়াইলে দেশের প্রথম ছয়লেনের মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু দুটি উদ্বোধন করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধুমতি সেতু ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু দুটি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমরা এভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে আমরা সেভাবেই কাজ করব।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুহাইলান ও বক্তৃতা করেন।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত। এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।
জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবেন। কারণ, বেনাপোল বন্দর থেকে মধুমতি সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দূরত্ব কম হবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও বাঁচিয়ে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা এবং নড়াইল জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর করেন।
মধুমতি সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারাদের মতে, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। এটি সেতুকে দৃষ্টিনন্দন করেছে। সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ যা রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করল। ২৭.১ মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চ গতির লেন ৪.৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে।
এদিকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, যা বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে, এটি নারায়ণগঞ্জ শহরকে বন্দর উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করল।
সেতুটির প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, ১.২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে সক্ষম করবে।
সেতুটির সঙ্গে নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পদ্মা সেতু থেকে জনগণ সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে বলেও জানান তিনি।
এই সেতু প্রকল্প ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫.২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।
ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে। পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২.১৫ মিটার। এছাড়া, ছয়লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ রোডও নির্মাণ করা হচ্ছে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]