সোহেল রানা মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসী সংস্কৃতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী মেলায় সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন জীবিকা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমাজের মূল ধারার মানুষের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে গত বুধবার উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের ধনজইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দাতা সংস্থা হেক্স-ইপারের সহায়তায় পল্লী সহযোগী বিষয়ক সংস্থা আরকো এর আয়োজন করে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম প্রধান অতিথি এবং খ্যাতনামা উপন্যাসিক ও সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আরকোর সভাপতি নাটোর-নওগাঁ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাহিন মনোয়ারা হক এতে সভাপতিত্ব করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, হেক্স-ইপারের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোরা চৌধুরী, আরকোর নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী, মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা প্রমুখ।মেলার ৯টি স্টলে আদিবাসীরা তাদের কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, জীব-জন্তু শিকারের হাতিয়ার, গয়না, কাপড়, তৈজষপত্র, খাবার, কলা, স্থাপত্য ও ভৌত-অভৌত পরিকাঠামো, অবকাঠামো, কারুকার্য ও অন্যান্য ঐতিহ্যসম্বলিত জিনিসপত্র প্রদর্শন করেন। স্টলগুলোতে মাসরুম, শামুক, ছোট শামুক, গজা আলু, মাদল, ট্যাটা, মুচু, সরতা, সাত খুপি, মনই, যান্টি, বিদা, রুসা, গোমাই, জোয়াল, খাঁকড়া, কুচিয়া, হুকা, মূসো, কচ্ছপ, ধারা-পাল্লা, নাঙ্গল, মাদুর, ঝিনুক প্রভৃতি দেখা যায়।মেলায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবশ্রেণি ও পেশার মানুষের ঢল নামে। মেলা দেখতে আসা কিশোরী জয়ন্তী রাণী বলেন, ‘মেলায় আদিবাসীদের ব্যবহার করা নানা জিনিস দেখলাম। এত বৈচিত্র্যময় জিনিস এর আগে দেখিনি।’মেলায় স্টল দিয়েছেন স্থানীয় আদিবাসী নারী রেনোকা হোর। তিনি বলেন, ‘স্টলে আমাদের সম্প্রদায়ের মাসরুম, শামুক, গজা আলু, মাদল, মুচু, সরতাসহ ২৫ রকমের ব্যবহার করা জিনিসপত্র আছে। আমরা চাই আমাদের কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরতে সরকার যেন জোরালো উদ্যোগ নেয়।’আর এক স্টল দেয়া বিমল ভূঁইয়া বলেন, ‘সাতখুপি, মনই, রুসা, গোমাই, জোয়াল, হুকা, মূসো, মাদুরসহ নানা রকম পিঠার স্টল দিয়েছি। প্রতিবছর এরকম আয়োজন করা হলে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরার সুযোগ পাবো।’
মেলায় স্টল দেয়া কারুশিল্প পতœীতলা উপজেলার নজিপুরের সত্ত্বাধিকারী তহুরা বানু ইতি বলেন, ‘আদিবাসী মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি শাড়িতে ফুল তোলা, ত্রিপিসে নকসা করা, নকশি কাঁথায় কারুকাজ জাতীয় কাজ করে সংসারে বাড়তি আয়ের যোগান দিচ্ছে আমার শো-রুমের মাধ্যমে। এখানে ১৫ আদিবাসী মেয়ে কাজ করছেন। আমি চাই আদিবাসী মেয়েরা তাদের কাজের দক্ষতার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাক।’বিকেলে সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাধিক্য বিবেচনায় সাঁওতাল, উড়াও, পাহান, মুন্ডাসহ ১০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক দলওদুটি বাঙালিসাসংস্কৃতিকদলতাদেরনিজ নিজ সংস্কৃতি তুলে ধরে নাচ ও গান পরিবেশন করে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]