হাবিপ্রবি প্রতিনিধি,দৈনিক শিরোমণিঃ করোনা মহামারীর বিরূপ প্রভাব দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতো দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাতে বসেছে। ফলশ্রুতিতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর লাইন আরো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক পাঠদান পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে করোনা মহামারীতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রমে জোর দেওয়া হলেও তা শিক্ষার্থীদের জন্য খুব বেশি সুফল বয়ে নিয়ে আসতে পারেনি। মূলতঃ যথাযথ উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ ও অনলাইন শিক্ষার জন্য ডিভাইস তথা স্মার্টফোনের অভাবে শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ফলে বিঘ্ন ঘটেছে সুষ্ঠু পাঠদান কার্যক্রমে।যা শহর এলাকার শিক্ষার্থী ও গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে,পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা।এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশ হওয়ার প্রবনতা বেড়েছে বহুগুণে ।করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম কতটুকু সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং তা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে ঘাটতি সৃষ্টি করছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী নিশাত মজুমদার বলেন- অনলাইন ক্লাস চলমান থাকলেও তা প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়ক নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় সাধারণত আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছি।ইন্টারনেটের ধীরগতির জন্য অনলাইন ক্লাসে ঠিকমতো অংশগ্রহণ করতে পারিনি যা পড়াশুনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতির সৃষ্টি করেছে।এভাবে চলতে থাকলে পূর্বের ন্যায় পড়ালেখায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।আবার উচ্চশিক্ষার আঁতুড়ঘর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচিত। মূলত এখানকার শিক্ষা অর্জনের পাঠ শেষ করে শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির সেবক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পায়।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে কিনা এবং তা শিক্ষার্থীদের কতটুকু সহায়তা করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মামুনার রশীদ বলেন- বর্তমানে অনলাইন ক্লাস চলমান রয়েছে কিন্তু গ্রামে অবস্থানের কারণে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে।এতে অনলাইন ক্লাসে ঠিকমতো অংশগ্রহণ করতে পারছি না।বলতে গেলে, অনলাইন ক্লাস আমার কোনো কাজে আসছে না ।আবার একবছরের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কি পড়বো, কিভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাবো এসব দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে।আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের আশার আলো একমাত্র আমরাই।কিন্তু এক বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত আমাকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে ফেলেছে।করোনা মহামারী শিক্ষার্থীদের যে শুধু পড়ালেখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে তা নয়। বরং দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকায় শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।সম্প্রতি এডুকেশন ওয়াচ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে,প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে মাত্র ৩১.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। অর্থাৎ,৬৮.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আসেনি, যা সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক!শিক্ষার্থীরাই একটি দেশের উন্নয়নের মূল কারিগর।কিন্তু এসব শিক্ষার্থীদের জন্য যদি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব না হয় তাহলে নিশ্চিত অন্ধকারে ছেয়ে যাবে শিক্ষার্থীদের জীবন ও তাদের ভবিষ্যত।তাই এ অনিশ্চয়তা থেকে উত্তোরণে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
১৫ views