ইশরাত মুহাম্মদ শাহ জাহান- মহেশখালী, কক্সবাজারঃ কক্সবাজারের মহেশখালীতে চার সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে মহেশখালীতে কর্মরত সাংবাদিক সমাজ। ১৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে উপজেলা পরিষদের সামনে ঐতিহাসিক বটতলায় মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের আহবায়ক স ম ইকবাল বাহার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধন ও সমাবেশ মহেশখালীতে কর্মরত ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের উপর হামলার ইন্ধন দাতা শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কথিত ডাক্তার ওসমানের লালিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার পূর্বক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিকরা।
সূত্রে জানা যায়, ১৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাত ১০ টার দিকে উপজেলার দ্বিতীয় প্রধান সড়ক গোরকঘাটা-শাপলাপুর সড়কের কালারমারদিয়া পাহাড়ি ঢালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সাংবাদিকদের বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য শাসানো হয়, ভেঙ্গে দওয়া হয় একটি ক্যামেরা।
আহত সাংবাদিকদের অভিযোগ, উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কথিত ডাক্তার ওসমানের নির্দেশে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা চালায়। এতে দৈনিক জনকণ্ঠের মহেশখালী উপজেলা প্রতিনিধি ফারুক ইকবাল, স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক ইনানীর উপজেলা প্রতিনিধি আ ন ম হাসান, দৈনিক কক্সবাজার বার্তার উপজেলা প্রতিনিধি এস এম রুবেল ও দৈনিক মেহেদী পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি এ কে রিফাত আহত হন।
আহত সাংবাদিকরা জানান- রাতে তাঁরা শাপলাপুর ইউনিয়নের জাহিদাঘোনা এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দুইটি মোটরসাইকেলে করে উপজেলা সদরে ফেরার পথে সড়কের পাহাড়ি কালারমারদিয়া ঢালা এলাকায় পৌঁছালে মুখোশধারী ৬-৭ জন সন্ত্রাসী তাঁদের পথরোধ করে মোটরসাইকেল আটকে দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা হাসান ও তাঁর পেছনের থাকা রুবেলকে মারধর করে এবং হাসানের হাতে থাকা ঘড়ি ও ডিএসএলআর ক্যামেরা ভেঙে দেয়। পরে পেছনের গাড়িতে থাকা ফারুক ও রিফাতের মোটরসাইকেলও আটক করে তাদের দুজনকেও মারধর করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলিভর্তি বন্দুক তাক করে ওই সাংবাদিকদের হুমকি দেয় যে, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমানের বিরুদ্ধে আগামীতে আর কিছু লিখলে ও পরবর্তী সময়ে তাদেরকে ওই ইউনিয়নে দেখা গেলে তাদের মেরে ফেলা হবে।
পরে আহত সাংবাদিকেরা মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন। খবর পেয়ে মহেশখালী থানার একদল পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সাংবাদিক জেএইচএম ইনুছের সঞ্চালনায় সমাবেশে অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মহেশখালী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুব রোকন, দৈনিক শিরোমণি পত্রিকার কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি মোঃ এরফান হোসাইন, দৈনিক চট্টগ্রামের পাতার সম্পাদক ছিদ্দিক আহমদ আতিক, দৈনিক দেশবার্তার প্রতিনিধি ইন্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান খান, হামলার শিকার দৈনিক কক্সবাজার বার্তার প্রতিনিধি এসএম রুবেল, দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিনিধি ফারুক ইকবাল, দৈনিক মেহেদীর প্রতিনিধি এ কে রিফাত, সাংবাদিক গাজী আবু তাহের সহ অন্যনরা বক্তব্য রাখেন।
আহত সংবাদিকরা বলেন, সম্প্রতি শাপলাপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে ওসমান গনিকে নিয়ে সংবাদকর্মীরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের ওপর ওসমান গনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তা-ই প্রতিশোধ নিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা করা হয়েছে।
তবে হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ওসমান গনি তার এক ফেসবুক বার্তায় বলেন, হামলায় আহত সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ নেই। প্রতিপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে ঘটনা সাজিয়ে তাঁকে জড়ানোর চেষ্টা করছে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবদুল হাই বলেন, ঘটনার কথা শোনার পর রাতেই পুলিশ সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে অভিযান শুরু করেছে। হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।