দেশে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাড়ার ফলে আরো দুটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। নতুন দুটি টার্মিনালের একটি মহেশখালীতে নির্মাণ করবে বেসরকারি কোম্পানি সামিট। অপরটি পটুয়াখালীর পায়রায় নির্মাণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। চলতি বছরই টার্মিনাল দুটি নির্মাণে পেট্রোবাংলা চুক্তি সই করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে সরকার দেশে নতুন করে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ না করে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন দুটিও ভাসমান হবে। মহেশখালীতে বিদ্যমান দুটি টার্মিনালও ভাসমান। পেট্রোবাংলা ও সামিটের পৃথক মালিকানায় দুটি টার্মিনালই পরিচালনা করছে এক্সিলারেট এনার্জি।
এদিকে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রূপান্তরের সক্ষমতা থাকলেও অর্থসংকটের কারণে বিদ্যমান দুটি টার্মিনাল ৫০-৬০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। ব্যয়বহুল এই জ্বালানি আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে পেট্রোবাংলা। এর বিল পরিশোধের জন্য ক্রমে বাড়ছে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, সামিট ও এক্সিলারেটের প্রস্তাব পেট্রোবাংলা যাচাই-বাছাই করেছে। এলএনজি ব্যয়বহুল হলেও এটি আমদানি ছাড়া অন্য বিকল্প আপাতত দেখছে না সরকার। স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান-উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি সফল হলে দেশে সরবরাহ করা মোট গ্যাসে স্থানীয় ও আমদানি উৎসের মধ্যে সমন্বয় করা যাবে। উভয় টার্মিনাল (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) নির্মাণ ও পরিচালনা চুক্তি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় হবে। দরপত্রবিহীন এই ব্যবস্থার ফলে চুক্তি নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো আপত্তি-মামলা হলে দায়মুক্তি পাবেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন দুটি টার্মিনালের প্রতিটির দৈনিক এলএনজি রূপান্তরের ক্ষমতা ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সামিট ও এক্সিলারেটরের সঙ্গে চুক্তি করার ব্যাপারে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনো সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত করার পর চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না থাকায় ২০১৮ সালের আগস্টে দেশে প্রথম এলএনজি থেকে গ্যাস রূপান্তর করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয় এলএনজি টার্মিনাল যাত্রা শুরু করে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি টার্মিনালের প্রতিটির দৈনিক উৎপাদন (রিগ্যাসিফিকেশন) সক্ষমতা ৫০ কোটি ঘনফুট। প্রথমটির মালিকানা রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা এবং দ্বিতীয়টির মালিক একটি বেসরকারি কোম্পানি। দুটিই ইজারার ভিত্তিতে পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। নতুন দুটি টার্মিনালও সেই একই কোম্পানির কাছে যাচ্ছে। আগের দুটি টার্মিনালের প্রতিটির বছরে ৩ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন টন গ্যাস ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। নতুনগুলোর ধারণক্ষমতাও একই পরিমাণ হবে। এগুলো নির্মাণ শেষ হলে দেশে স্থানীয় ও আমদানিকৃত গ্যাসের পরিমাণ কাছাকাছি দাঁড়াবে।
জানা যায়, সামিটের প্রস্তাব অনুযায়ী তাদের দেওয়া প্রতি ইউনিট (মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট-এমএমবিটিইউ) এলএনজির দাম পড়বে ২০ মার্কিন ডলার। হেনরি হাব ইনডেক্স অনুসরণ করে এই মূল্যহার প্রস্তাব করেছে তারা। অন্যদিকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ান যে দামে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনে, সেই দামে তা ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিক্রি করবে এক্সিলারেট। ২০২৩ সাল থেকে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের আন্তর্জাতিক দামের তিন মাসের গড়ের ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ হারে এলএনজি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে।