ইশরাত মুহাম্মদ শাহ জাহান- মহেশখালী, কক্সবাজার: সিন্ডিকেট, দখলদারিত্ব, অবব্যস্হাপনা সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত দুর্নীতির আতুর ঘর হিসেবে খ্যাত মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে আবারও বাড়লো ভাড়া। যেখানে নেই কোন জেটিঘাটের অবকাঠামোর উন্নয়ন ,নেই কোনো যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা, সেই ঘাটে থেমে নেই দূর্নীতি ও যাত্রীদের হয়রানি! জেটিঘাটের অবব্যস্হাপনা, যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা সহ নিরাপত্তার ব্যবস্হা না নিয়ে ভাড়া বৃদ্ধির মহোৎসবে মেতে উঠেছে কর্তৃপক্ষ।
কেউ নেই বলার এ জেটিঘাট সম্পর্কে। তার উপর আবার ৮০ টাকার জায়গায় ১২০ টাকা ভাড়া! চীনের বড় দুঃখ ছিল হোয়াংহো নদী আর মহেশখালীবাসির বড় দুঃখ, দুর্ভাগ্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেটিঘাট।
সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ সহ ওমিক্রন- এর প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ বৃদ্ধির আশংকা দেখা দেয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধ, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ১২ জানুয়ারি হুট করে স্পীডবোট ও গামবোট এর যাত্রী সংখ্যা এবং ভাড়া নির্ধারণ করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
এতে স্পীড বোটে ৬ জন যাত্রী সংখ্যা নির্ধারণ করে ১২০ টাকা ও গামবোটে ৩০ জন নির্ধারণ করে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেন।
হঠাৎ প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পরপরই সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে।
সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারী করোনার পরিস্থিতি উর্ধ্বমূখী হওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এমনটি করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রকোপ বেশি দেখা দিলে সরকার নির্দেশনা জারি করে। তন্মধ্যে যানবাহনে আগের তুলনায় ৫০% যাত্রী কম বহন করে, ভাড়া বৃদ্ধি না করে নির্দেশনা জারি করে সরকার। কিন্তু সাধারণ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- কোনো রকম মহামারী পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে যাত্রী হয়রানির উদ্দেশ্য এমনটি করা হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, স্পীড বোট ভাড়া বৃদ্ধি সহ নানান সিস্টেম,৷ ফন্দি চালু করা হচ্ছে ঘাট নিয়ে। যা অনৈতিক, জনবিরুদ্ধ এবং সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতা।
করোনার মহামারী কে কেন্দ্র করে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথেের সিন্ডিকেটের কারসাজি।
কারণ হিসেবে অনেকেই বলেছেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী স্পিড বোটে ৬ জন যাত্রী নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা অনেকেই তোয়াক্কা করে না।
মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে যে সবসময় ঘাটে সদীর্ঘ লাইন, ঝামেলা লেগেই থাকত, কারণঃ জেলা সদরের সাথে মহেশখালীর যোগাযোগ মাধ্যম একমাত্র নৌপথ। প্রতিদিন কয়েক হাজার প্রশাসনিক কাজ সহ নানা কাজে কক্সবাজার আসা যাওয়া করতে হয়। ঘাটের অনিয়ম নিরসনে কাজ না করে- করোনা মহামারীকে পুঁজি করে এখন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অনেকেই মনে করেন- করোনা পরিস্থিতিতে মহেশখালী-কক্সবাজার জনপ্রতি ৮৫ টাকা থেকে লাফিয়ে ১২০ টাকা (৬জন যাত্রী) স্পীড বোট ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও (৬০℅ বৃদ্ধি) সাধারণ জনগণের আয় বৃদ্ধি পায়নি। বরং আগের স্বাভাবিক আয়ের তুলনায় কমেছে। একদিকে সমানতালে চাল, ডাল, তেল সহ নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। এমন সময়ে করোনা মহামারী কে পুঁজি করে সরকারের সিদ্ধান্ত কে জণগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বর্তমানে মহেশখালীতে কয়লা বিদ্যু সহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে জায়গা জমি অধিগ্রহণে দিশেহারা মহেশখালীবাসী। দ্বীপবাসীর আয়ের অন্যতম লবণ শিল্পও এখন বিলীনের পথে। চাষিররা পাচ্ছে না লবণের ন্যায্য মূল্য। এমন পরিস্থিতি দেশ লকডাউনের পথে।
হঠাৎ করে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত সাধারণ জণগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
মহেশখালী কক্সবাজার নৌপথের অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধ করে আগেন নিয়মে যথাযথ ৭৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে সাধারণ জণগণের ভোগান্তির লাগাম টেনে ধরা এখন সময়ের দাবি।
২০ views