আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে নির্বাচিত হতে যাচ্ছে চীন, সৌদি আরব ও রাশিয়া। ‘ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে’র অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশগুলোকে মঙ্গলবার নির্বাচনের মাধ্যমে কাউন্সিলটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। খবর আল জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ানের।
মানবাধিকার কাউন্সিলে এসব দেশের যুক্ত হওয়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমগ্র বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীরা।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএন উয়াচের নির্বাহী পরিচালক হিল্লেল নিউয়ার বলেছেন, ‘স্বৈরশাসকগুলোকে জাতিসংঘের বিচারক নিয়োগ দেয়ার মানে হলো আগুন লাগানোয় সাজা পাওয়া কেউ ফায়ার ব্রিগেডে নিয়োগ পাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, তারা কখনো জাতিসংঘে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হতে পারে না।’
সম্মেলনে ‘সিটিজেন পাওয়ার ইনিশিয়েটিভ ফর চায়না’র প্রেসিডেন্ট ইয়াং জিয়ানলি বলেন, ‘হংকংয়ের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ধ্বংসে জড়িত চীন। যেকোনো মানদণ্ডে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতি চীন ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করেছে। এটা যদি মানবাধিকার হরণকারী কাউন্সিলের নির্বাচন হয় তাহলে চীনকে ভোট দেয়া বেশি যুক্তিযুক্ত হবে, কারণ তারা বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নেতৃত্ব দেবে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৪৭ । তবে ১৫টি শূন্য আসনের বিপরীতে নতুন সদস্য রাষ্ট্র নির্বাচনের জন্য মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপ থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে এসব স্থান পূরণ হবে। ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত দেশগুলো ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে।
জানা গেছে, ভোটাভুটিতে যে দেশটি ৯৭টির কম সদস্য দেশের ভোট পাবে কেবল সেই দেশটিই কাউন্সিলে যুক্ত হতে ব্যর্থ হবে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সৌদি আরব, চীন, নেপাল, পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান।
অন্যদিকে আফ্রিকা অঞ্চলের চারটি আসনের জন্য লড়বে আইভরি কোস্ট, সেনেগাল, মালাউয়ি এবং গেবন। পূর্ব ইউরোপীয় দুইটি আসনের জন্য রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী ইউক্রেন। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের তিন আসনের বিপরীতে মেক্সিকো, কিউবা ও বলিভিয়া। আর পশ্চিম ইউরোপীয় দুই আসনের জন্য প্রার্থী কেবল ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। ফলে এসব অঞ্চলের জন্য ভোটাভুটির সুযোগ নেই।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাজারো অভিযোগে জর্জরিত রাজতান্ত্রিক দেশ সৌদি আরব। সর্বশেষ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া সৌদি জোট ইয়েমেনে বেসামরিক মানুষের ওপর হামলার মধ্যে দিয়ে ‘যুদ্ধ অপরাধ’ সংঘটিত করছে বলেও অভিযোগ আছে। এতকিছুর পরেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটি এই কাউন্সিলের সদস্য ছিল।
অন্যদিকে, উইঘুর মুসলিমের ওপর নির্যাতনসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দেশ চীন। সম্প্রতি রুশ বিরোধী দলীয় নেতা নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের বিশ্বের সামনে বাকস্বাধীনতা হরণের কাটগড়ায় পুতিনের রাশিয়া।
ইউএন উয়াচ বলেছে, ‘ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এর আগেও এই দেশগুলো অনেক অপরাধের বিরুদ্ধে হওয়া তদন্তকে আটকে দিয়েছিলেন। ভবিষ্যতেও এই কাজটি করবে তারা।’
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]