নরসিংদী প্রতিনিধি মো: খায়রুল ইসলামঃ নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএমকে “দৈনিক শিরোমণি” পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন।
মানবিক পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদার গত ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই নরসিংদী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে এ জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি নরসিংদী জেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শতভাগ লকডাউন কার্যকর করেন। এমনকি করোনার প্রার্দুভাবের জন্য খেঁটে খাওয়া কর্মজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে; বিষয়টি অনুধাবনের পর তিনি নিজ উদ্যোগে লকডাউন বিদ্যমান থাকাকালীন সময়ে ১০ হাজারের ও বেশী কর্মহীন গরীব মানুষের বাড়ীতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন।
এছাড়া জেলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের নেতৃত্বে পুলিশ অত্যন্ত পেশাদারীত্বের সাথে শতভাগ আন্তরিকতার মাধ্যমে লকডাউন কর্মসূচি পরিচালন, বিদেশ ও অন্যান্য জেলা শহর থেকে আগত মানুষকে হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত, জনগণকে সচেতন করতে স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত ৬ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, বেশ কয়েকবার মাইকিং, করোনা সংক্রমণ হওয়ার পদ্ধতি ও প্রতিরোধ বিষয়ে ফেস্টুন, ব্যানার প্রদর্শণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা হ্যান্ডবিল আকারে প্রচার, অসচেতন কর্মজীবি জনসাধারণের মধ্যে ফ্রি ১০ হাজার মাস্ক বিতরণ, পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি ও শরীরে এন্ট্রিবডি তৈরী করতে পুষ্টিকর খাদ্য ও ঔষধ প্রদান, সরকার ঘোষিত রেড জোন এলাকায় প্রবেশ ও বাহির পথে লকডাউন এবং উক্ত এলাকার ম্যাপ ও ব্যানার প্রদর্শন, করোনা উপর্সগ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী মানুষের দাফনে সরাসরি সহায়তা ও আইন-শৃংঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ পরিস্থিতি বিবেচনায় বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে নরসিংদী জেলায় মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত মাদক নির্মূলে চলমান অভিযান পরিচালনায় মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত মামলার ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হয় এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারের নির্দেশে। এছাড়া ইয়াবা, গাঁজা ও গাঁজার গাছ, প্যাথেডিন, বাংলা মদ, চোলাই মদ, দেশি-বিদেশি মদ, ফেন্সিডিল, হিরোইনসহ বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
মহামারী করোনা প্রতিরোধের যুদ্ধে শুরু থেকেই নরসিংদীতে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএম এর দিকনির্দেশনায় জেলা পুলিশের সদস্যরা ‘অগ্র সেনানী’র ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। লক ডাউনের পর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনে যাত্রী সেবা তদারকি অব্যাহত রেখেছে নরসিংদী জেলা পুলিশ।
আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণসহ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে লকডাউন, করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যাক্তির লাশ নিশ্চিতে দাফন, নিরাপদ সৎকার কাজের সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়। একই সাথে চালাচ্ছেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করণ ক্যাম্পেইন। বলা যায়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনীতিবিদদের সাথে পালা দিয়েই বিভিন্নমুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জেলা পুলিশের সদস্যরা। নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা মাথায় গামছা বেধে কেটেছেন অসহায় কৃষকের জমির পাকা ধান। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করছেন ত্রাণ সামগ্রী। এখনও ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। হট লাইনে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত অভুক্ত মানুষের ঘরে পৌছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। রমজান মাসে এতিম, প্রতিবন্ধী, ভাসমান ও ছিন্নমূল অনাহারী মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন ইফতার। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ ফ্রি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তারদের সাথে নিয়ে তৈরী ভ্রাম্যমান টিম অ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ী বহর স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকা থেকে এলাকায়।
সম্প্রতি মানুষকে ঘরে রাখতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে সুলভ মূল্যে দৈনন্দিন বাজার সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্ধোধন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, করোনার ছোবল থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের রক্ষা করতে পুলিশ লাইন্স ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জীবাণুনাশক ট্যানেল বসানো হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে এলাকাবাসী ভয় পেলেও পুলিশ সদস্যরা স্বমহিমায় এসব লাশের দাফন সম্পন্ন করছেন।
করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা প্রদান করে আলোচনায় এখন জেলা পুলিশ। তাই সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন জেলা পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা। সর্বশেষ লকডাউন নিশ্চিতে জেলা পুলিশের কর্মকান্ড ও ধান ঘরে তোলার সময়ে কৃষকের ধান কেটে দিয়ে আলোচনার সম্মুখ ভাগে চলে আসেন এই বাহিনীর সদস্যরা।
জেলা পুলিশ তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংকট মোকাবেলায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান, অসহায় দুস্থ ও পরিবহন শ্রমিকদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রমজান মাসের শুরুতেই নরসিংদী জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ‘‘সুলভ মূল্যে ঘরের বাজার” কার্যক্রম উদ্ধোধন করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, ডাল, তৈল, ছোলা, বেশন, লবন, চিনি, আলু, পিয়াজ, বেগুন, ইত্যাদি সূলভ মূল্যে মানুষের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এর ফলে লোক সমাগমপূর্ণ বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় কমানো সম্ভব হয় এবং মানুষ জনকে অধিক সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যায়।
তাছাড়া পবিত্র মাহে রমজানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খুচরা বাজারের চেয়ে কম মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয় করা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি ক্রয় করা হয়। ফলে কৃষকরা সবজির ন্যায্য মূল্যও পেয়েছে।
নরসিংদী সদর-সহ, মাধবদী, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা ও বেলাব থানাধীন বিভিন্ন স্থানে গণজমায়েত রোধ, অযথা ঘোরাঘুরি বন্ধে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করছে জেলা পুলিশ।
এছাড়া গত রমজান মাসের সময়ে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে না দেয় সে লক্ষ্যে বাজার গুলোতে সাঁড়াশী অভিযান চালানো হয়েছিল।
মত বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করা হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ সকলকে ঘরে অবস্থানের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এর বাহিরেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, এতিম, পথ শিশু, রিক্সাচালক, ভিক্ষুক, দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে জেলার ৬টি উপজেলার ৭টি থানায় ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
লকডাউন নিশ্চিতে জীবনবাজী রেখে দিবানিশি বিরামহীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা পুলিশের সদস্যরা। করোনার কবল থেকে মানুষকে সুস্থ রাখতে শহরে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে। জোরদার করা হয়েছে পুলিশি টহল। নরসিংদী জেলার সাথে অন্যান্য জেলা থেকে প্রবেশ ও প্রস্থান রোধে সড়ক মহাসড়ক ও শহরের গুরুত্বপূর্ণস্থানগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সমস্যায় পড়া মানুষগুলোকে সাহায্যে স্বশরীরে উপস্থিত হচ্ছেন জেলা পুলিশের কর্ণধার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএম।
নরসিংদী পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন, পুলিশের প্রধান কাজ হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই দুটি কাজের পাশাপাশি এখন আমরা কোভিড-১৯ মোকাবেলা দিন রাত কাজ করে চলেছি। লকডাউন নিশ্চিত ও মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলা থেকে মানুষের প্রবেশ ও প্রস্থান রোধে সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭২টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ পযর্ন্ত দশ হাজারেরও বেশি পরিবারের মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নিয়ে ভ্রাম্যমান মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। একই সাথে টেলি সেবা চালু করা হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফন কাফন করছে পুলিশ সদস্যরা। বাজার নিয়ন্ত্রণসহ গুজব রোধে সকল ধরনের কাজ করছে আমাদের পুলিশ। এক কথায় বলতে গেলে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক অবস্থার প্রেক্ষিতে সকল কর্মকান্ডে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। পুলিশ তো সবসময়ই মাঠ পর্যায়ে অনেক কাজ করে থাকে। করোনাকালে আমাদের উলেখিত কাজসমূহ অব্যাহত থাকবে শেষ পর্যন্ত।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও মিডিয়া সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক রূপণ কুমার সরকার পিপিএম জানিয়েছেন, নরসিংদী জেলা পুলিশের ‘সুপার হিরো’ হলো আমাদের এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার স্যার। স্যারের সুদক্ষ নির্দেশনায় ৬টি উপজেলার ৭টি থানার সকল পুলিশ সদস্যরা করোনা সংকট মোকাবেলায় ও লকডাউন নিশ্চিতে দিবানিশি কাজ করে যাচ্ছে। অসহায়দের খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে হ্যান্ড স্যানিটেইজার, মাক্স বিতরণসহ সকল ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
এক কথায় মানব সেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।