মোঃ আনিসুর রহমানঃমুক্তাগাছা উপজেলা ভূমি অফিসে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এক বৎসর পূর্ণ করেছেন মাসুদ রানা। তিনি ২০২০ এর ৫ জুলাই যোগদানের পর এক বছরে ভূমি সেবা সহজতর করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এসিল্যান্ড মাসুদ রানা’র ভূমি সেবা সহজতর করতে গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ । সুফলভোগীরা এসিল্যান্ড মাসুদ রানা’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একাধিক সুফলভোগী বলেন, তারা ভূমি সংক্রান্ত (নামজারি,মিস কেস)যাবতীয় সমস্যা নিয়ে সরাসরি এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলতে পেরেছেন এবং ভোগান্তি ছাড়াই সমস্যাগুলোর সমাধান পেয়েছেন। অনেকেই সমাধান না পেলেও করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ পেয়েছেন। এসিল্যান্ড মাসুদ রানা মুক্তাগাছা উপজেলায় যোগদান করেন করোনা প্রাদুর্ভাব কালীন সময়ে। তিনি যোগদান করার পর থেকে সরকারি নির্দেশনামতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে রাখতে অবিরাম ছুটে চলছেন। তার সকল কর্মকান্ড নিয়ে উপজেলার সর্বমহলে চলছে আলোচনা পর্যালোচনা। সচেতন মহল মনে করেন এসিল্যান্ড মাসুদ রানা তার সততা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানুষের আস্থার জায়গা দখল করতে এবং সেক্ষেত্রে সফল হয়েছেন তিনি।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা অবৈধ দখল থেকে সরকারী খাসজমি উদ্ধার, মামলা নিষ্পত্তি, পুকুর উদ্ধার ও ভূমি অফিসের গতিশীলতা আনায়নে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন । মুক্তাগাছা পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২০.৪ একর জমি উদ্ধার করেছেন তিনি। ১ নং খাস খতিয়ানের উদ্ধারকৃত জমিগুলো হলো- মুক্তাগাছা পৌরসভায় সরকারী পুকুরসহ ৮ একর, দুল্লা ইউনিয়নের মলাজানি মৌজায় ১৪.৮৭ একর ও ভালুকচাপড়ে ২০ শতাংশ, ঘোগা ইউনিয়নের জামগড়ে ৩.৪৫ একর, দাওগাঁও ইউনিয়নে গোদাপাড়া মৌজায় ২৫ শতাংশ, কুমারগাতার সত্রাশিয়ায় ৬৩ শতাংশ ও তারাটি ইউনিয়নের শশা মৌজায় ১০১ শতাংশ। যা ২০২০-২১ অর্থ বছরে উদ্ধারকৃত সম্পত্তির মূল্য ১শ কোটি টাকারও বেশি।
তিনি মুক্তাগাছায় যোগদানের পর এপর্যন্ত ২০১২-১৩ ইং সালের মিস মামলাসহ ৪১৩টি মিস মামলার নিস্পত্তি করা ছাড়াও গত এক বছরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাসুদ রানা’র ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩৬৪ টি মামলা নিস্পত্তি করা হয়েছে। তন্মধ্যে ৩১ টি মামলায় ৩৩জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ, বাকি ৩৩৫ টি মামলায় জরিমানাদন্ডাদেশ দেয়া হয়। ভিপি সম্পত্তির নবায়নে ৩০ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় করেন তিনি।
তিনি মুক্তাগাছায় যোগদানের পর ভূমি দালালদের দৌরাত্ম্য দৃশ্যমান হারে কমেছে এবং সরাসরি সাক্ষাৎ করে ভূমি সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ নিতে পারছে সাধারণ জনগণ। তিনি সকলকে আহবান জানান যে,আপনার নিজের নামজারি কাজটি আপনি নিজেই করতে আসুন এবং আপনার সমস্যার কথা আমাকে বলুন। আমার কাছে আসতে দালালের প্রয়োজন হয়না আর দালালদের খপ্পরে পড়ে কেউ প্রতারিত হবেননা। এছাড়াও সাধারণ মানুষ যাতে নামজারি করতে এসে ভোগান্তির স্বীকার না হন, তাই নামজরি মামলাগুলো দ্রুততম সময়ের (২৮ দিনের) মধ্যে নিষ্পত্তি করে থাকেন। ২৮ দিনে করা নামজারি মামলা নিষ্পত্তির হার ৭৫%-৮৫%। এসিল্যান্ড মাসুদ মুক্তাগাছায় যোগদানের পর থেকে শুনানী ও গণ শুনানি ইত্যাদি কার্যক্রমে ভূমি কর্মকর্তা ও সেবা গ্রহীতাদের মাঝে দুরত্ব শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। তিনি প্রতি বুধবার গণশুনানী নিচ্ছেন। এ গণশুনানীতে সকলেই তার ভূমি সমস্যার সমাধান পাবেন। সমাধান না পেলে করণীয় সম্পর্কিত পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। তিনি সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জমি/ অন্যান্য বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেন।
জানাগেছে, এসিল্যান্ড মাসুদ রানা ৩৫ তম বিসিএস এ অংশগ্রহন করে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন ২০১৭ সালে।
এর আগে একটি বেসরকারী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
এছাড়া তার পূর্ববর্তী কর্মস্থল ছিলো- সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খাগড়াছড়ি কালেক্টরেট অফিস, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে সহকারি কমিশনার (ডেপুটেশন)ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলাপ্রশাসকের কার্যালয় ময়মনসিংহ ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গৌরীপুর কর্মরত থাকার পর ২০২০ এর ৫ জুলাই মুক্তাগাছায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। লাস্ট পেরায় আমি বাদ দিয়ে দিন।
নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলায় জন্মগ্রহণ করা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা জাহাঙ্গীরপুর টি আমিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। প্রথম বিসিএস পরীক্ষাতেই তিনি বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারে জাতীয় মেধা তালিকায় ২০ তম স্থান অধিকার করেন।
সকলের সাথে সমন্বয় করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে কাজ করতে পছন্দ করেন তিনি।
এসিল্যান্ড জানান, এ এলাকার মানুষের সহযোগিতায় এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে উপজেলা রেকর্ড রুম সংস্কার করা হয়েছে। এর ফলে উপজেলার সকল রেকর্ড সুসজ্জিত করে রাখা হচেছ। সেই সাথে ডিজিটাল রেকর্ড রুমের উন্নয়ণ কাজ চলছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর সংস্কার চলমান রয়েছে। সকল ভূমি অফিসে ভূমি উন্নয়ণ কর ডিজিটাল মাধ্যমে আনার কাজ চলছে। এসিল্যান্ড মাসুদ রানা যোগদানের পর ৯৭ জন গৃহহীন ও ভূমিহীনকে ৩ একর জমিতে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। প্রতিজন ২ শতাংশ জমির মালিকানা পেয়েছেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক লকডাউনে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।