প্রিন্স আরিফ খান, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি: মেহেরপুর সদর উপজেলার বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি ও তার দুই ছেলে সাদ্দাম হোসেন এবং সুৃমনের হাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা নার্গিস খাতুনকে লাঞ্ছিতের ঘটনা অভিযোগ উঠেছে ।
বুধবার সকাল ৯ টার দিকে বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর ২০২২ থেকে কোন রকম কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রধান শিক্ষককে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়।। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেহেরপুর জজ কোর্টের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌশলী গোলাম মোস্তফা ৩০ মার্চ-২০২৩ তারিখে সাক্ষরিত আইনগত মতামত প্রসঙ্গে ৪ অক্টোবর-২০২২ হইতে ১ এপ্রিল-২০২৩ পর্যন্ত ১৮০ দিন পূর্ণ হওয়ায় আবুল কালাম আজাদ অব্যাহতি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। যে কারণে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বিদ্যালয়ে স্বপদে দায়িত্ব পালনে ২ এপ্রিল থেকে আইনগত ভাবে স্কুল পরিচালনায় কোনরকম বাধা নেই। যার অনুলিপি জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বারাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত করে বুধবার বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু তার কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় তা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করলে কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি ও তার ছেলে সাদ্দাম হোসেন এবং সুমন স্ব-দায়িত্ব পালনে নিষেধ করেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এসময় সভাপতি ও তার ছেলে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও সহকারী শিক্ষক নার্গিস কে মারধর করেছে ।
প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, স্ব-দায়িত্ব পালনে বাধ্য বাধকতা না থাকায় আমি ও সহকারী শিক্ষিকা নার্গিস খাতুন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করি। এসময় সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি ও তার ছেলে সাদ্দাম হোসেন ও সুমন এসে আমাদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী নার্গিস কে জড়িয়ে ধরে লাঞ্চিত করে এবং ব্যাগ কেড়ে নিতে চায়। এসময় নার্গিস তাদের ধস্তাবস্তিতে আহত হন।
শিক্ষিকা নার্গিস জানান, সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি ও সুমন আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কাছ থেকে ব্যাগ কেড়ে নিতে চায় এবং আমাকে ফেলে দেন। এতে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে ছিঁড়ে গেছে। তিনারা এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং নিজ দায়িত্ব পালনে সকলের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এদিকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, শিক্ষকবৃন্দ আমাদের না জানিয়েই তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। কক্ষের কোন কিছু ব্যাগে ভরে নিয়ে যাচ্ছে কিনা তা জানতেই ব্যাগ চেক করার জন্য কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে শিক্ষিকা পড়ে শরীরে চোট লাগে। তার অভিযোগ কমিটিকে না জানিয়েই তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকেছে।
এবিষয়ে যদিও বিদ্যালয়ে ছুটি রয়েছে তবুও কোচিং চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রধান শিক্ষক ও নার্গিস ম্যাডাম বিদ্যালয় কক্ষে প্রবেশ করলে সুমন স্যার ভিডিও ধারণ করে এবং ব্যাগ কেড়ে নিয়ে বাইরে চলে যায়। এতে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসময় সভাপতি এসে স্যার এবং প্রধান শিক্ষক দু’জনকেই মারধর করে।বিষয়টি সম্বন্ধে বারাদী ক্যাম্পকেও অবহিত করা হয়েছে।
বারাদী ইউপি চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সম্বন্ধে দু’পক্ষই পৃথক পৃথক ভাবে অভিযোগ জানালেও পরবর্তীতে কেউই আর যোগাযোগ করেনি। বিদ্যালয়ের শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে সকলে একসাথে বসে আইনি প্রকৃয়ায় ও সমঝোতা করার প্রয়োজন। এবিষয়ে তিনারা চাইলে একত্রে বসে সমাধান করা হবে বলেও তিনি জানান।
জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে ফোন করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।
তবে এ সমস্যা এড়িয়ে বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সকলে বসে সমাধান অতি জরুরি বলে অভিজ্ঞ মহল মত প্রকাশ করেছেন।