এস,এম শাহাদৎ হোসাইন গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ হামার স্বামী মেলাদিন আগে মরছে। ছৈলপৈলও (সন্তান) নাই। মানসের বাড়িত এনা কাজকাম করি খাচুনু, সেটাও আর পাম না। শরীলের ওগ-বালাই সড়ে না। পুরানা ঘরটা ভাঙি গেচে, জোড়াতালি দিয়্যা আচোম। ঝড়ি-বাতাসের ভয়ে আতোত নিন্দে ধরে না। মোক একনা সরকারি ঘর নিয়্যা দেও বাহে! তোমারগুলার জন্নে ভগবানের কাছে আশির্বাদ করমো। আঞ্চলিক ভাষায় এমনভাবে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তরফবাজিত গ্রামের বিধবা সিন্দুবালা সরকার (৬১)নামের এক বৃদ্ধা। সিন্দুবালা সরকার একই গ্রামের মৃত মনিন্দ্র নাথ সরকারের স্ত্রী। দা¤পত্য জীবনে নেই কোনো সন্তানাদি। মৃত্যুকালে স্বামী রেখে গেছেন মাত্র কয়েক শতক জমি। এছাড়া সিন্দুবালার নেই কোনো সহায়-সম্বল। ইতোমধ্যে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে ছুটতে হচ্ছে কৃষকের মাঠে বা অন্যের দুয়ারে। বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রম বিক্রি, আবার কখনো অন্যের বাড়িতে করতে হয় ঝির কাজ। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন সিন্দুবালা। কিন্তু বিধিবাম! ওইসব কাজের জন্যও কদর কমেছে তার। বার্ধক্য বয়স ও নানা অসুস্থতার কারণে এলাকার মানুষ তাকে এখন কাজের জন্য তেমনটা ডাকেন না। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে সিন্দুবালাকে। এমন পরিস্থিতিতে বিধবার একমাত্র শোবার ঘরটিও জীর্ণসির্ণ অবস্থা। ছিদ্র টিনের চালায় লাগানো হয়েছে পলিথিন ও ত্রিপল। দিনের বেলায় বেড়ার ফুটো দিয়ে দেখা যায় সুর্য্যের আলো। রাতে চালার উপরে দিয়ে নজরকাড়ে আসমানের তারা। জোড়াতালি এ ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন সিন্দুবালা। এক মুঠো অন্নের যোগানে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাবেন কিন্তু চোখে আসে না ঘুম। ঝড়-বৃষ্টির আতঙ্কে একাকী নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌঁড় দিতে হয় অন্যের বাড়িতে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে ঝুঁকিপুর্ণ এ ঘরে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে সিন্দুবালার শরীরে। এসব রোগ নিরাময়ে নিয়মিত ঔষধ খাবেন, এমন সামর্থও নেই তার। একেবারই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে কোনোমতে বেঁচে রয়েছে তিনি। সরকারি সুবিধাবঞ্চিত এই বিধবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরেই একাকী বসাবাস করে। মৃত্যুর আগে সরকারি বরাদ্দের পাকাঘরে ঘুবাবেন, এমনটাই আশা করছেন তিনি। সাদুল্লাপুর উপজেলায় জমি আছে, ঘর নেই প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় সিন্দুবালাকে পুর্নবাসন করে দেওয়ার দাবি করেন এলাকাবাসী। জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মনজু মিয়া সিন্দুবালার জরাজীর্ণ ঘরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জমি আছে, ঘর নেই প্রকল্পে সুবিধাভোগিদের তথ্য ইতোমধ্যে অনলাইনে যুক্ত করা হয়েছে। সেই সময়ে সিন্দুবালা বাড়িতে ছিলেন না। এ কারণে তার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]