এদিকে ডাল বড়ি তৈরি নিয়ে একাধিক গ্রামের বধুদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, এই বড়ি তৈরি করতে উপকরণ লাগে ২ টি। মাসকলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়া বা কুমড়ো জাতীয় সবজি। গৃহবধুরা জানান, বড়ি রোদে শুকিয়ে নেওয়ার জন্য বড় চাটাই বা পাটি এবং পাতলা সুতি কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হয়। বড়ি তৈরির আগের বিকালে ডাল ঝেড়ে, ধুয়ে ভিজিয়ে রাখেন তারা। সন্ধ্যায় চাল কুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখেন। এরপর কুমড়ো ভালভাবে ধুয়ে নেন, যেন এর টক ভাব না থাকে। ধোয়া হলে পরিস্কার পাতলা কাপড় বেঁধে সারারাত ঝুরিয়ে রাখেন। এতে কুমড়োর সব পানি বেরিয়ে ঝরঝরে হয়ে যায়। পরের দিন ভোরে ডালে পানি ছেঁকে, শিল-পাটায় ডাল খুব মিহি করে বেঁটে নেন অথবা এখন কেউ কেউ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নেন আব্র কেউ বা রাইচ মিলে নিয়ে যান। এরপর ডালের সঙ্গে তারা কুমড়ো মেশান। খুবই ভাল করে হাত দিয়ে দুটি উপকরণ মেশান যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রন হালকা হয়। তারপর একটি বাটিতে পানি নিয়ে তাতে বড়ির আকারে একটু ফেলে পরিক্ষা করে নেন। যদি দেখেন বড়ি ভেসে উঠছে এবং পানিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে না তাহলে বুঝে নেন আর ফেটতে হবে না। আর ডুবে গেলে কিংবা ছড়িয়ে গেলে আরও ভাল করে মাখান। সবশেষে চড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে দেন। তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর শেষ দিন বড়ি উঠিয়ে কাপড়ে ঝুলিয়ে রাখেন। ভালভাবে বড়ি শুকানো হলে কাচের বোয়েমে ভরে রাখেন বেশি দিন ধরে রান্নায় ব্যবহার করার জন্য।
মনোহরপুর গ্রামের গৃহবধু সাথী খাতুন, তানিয়া খাতুন জানান, শীত মৌসুমে কুমড়োর বড়ি দেয়াটা সকল পরিবারের মহিলারা একটা উৎসব মনে করে। কেননা প্রতিটি পরিবারের এটার জন্য আয়োজন থাকে। পূর্বে এ ডাল পিসা হতো ঢেঁকিতে। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্র নির্ভর সময়ে এটা করা হচ্ছে না। ফলে শীতের রাত জেগে ঢেঁকিতে আর পাড় দিতে হবে না।আরো অনেক গ্রামের সুমাইয়া খাতুন ও আফরিন সুলতানা মৌ জানান, কুমড়ো বড়ি গৃহিনীদের জন্য শীতকালীন একটা যেন একটা রুটিন মাফিক কাজ। এ বড়ি নিয়ে গ্রাম্য সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কার।আবার কেউ কেউ বলেন, কুমড়ো বড়ি দিলে ওই দিন যদি কুয়াশায় সূর্যের দেখা না মেলে তাহলে অনেকে বলে থাকেন বড়ি দেয়া গৃহিনীর কারনে সূর্যের আলো মিলছে না। যদিও একথার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই।তবে শীত মৌসুমে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে বড়ি দিয়ে তরকারি রান্না করতে দেখা গেলেও গরম পড়ার সাথে সাথে বড়ির চাহিদা কমে যায়। অন্যদিকে চলতি বছর ডালের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় বড়ি দেওয়ার পরিমাণ অনেকটা কমেছে বলে একাধিক গায়ের বধুরা জানিয়েছেন।কুমারঘাটা বাজারের মিল মালিক জানান এবছর ব্যবসা তেমন ভালো না।কিন্তু কয়েকদিন ধরে কাষ্টমার পাচ্ছি।দাম আগের দামেই আছে।প্রতি কেজি কলাই মাড়াই করতে ১০ টাকা করে নিচ্ছি।