জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর প্রাতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ
যশোরের চাঞ্চল্যকর তিন বছরের কন্যাসহ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর আত্মহত্যা ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যা উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত গৃহবধূ পিয়া মন্ডলের পরিবারের পক্ষে এই মামলা করা হয়েছে। পিয়া মন্ডলের ভাই চন্দন মন্ডল বাদী হয়ে মণিরামপুর থানায় ৩০৬ ধারায় মণিরামপুর থানায় মামলাটি করেন।মামলার বিবরণে জানা গেছে, মণিরামপুরের সুজতপুর গ্রামের ননি গোপাল মন্ডলের ছেলে মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক কনার মন্ডলের পরকীয়ার বিষয়টি স্ত্রী পিয়া জানতে পারায় তাকে ও তিন বছরের কন্যাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। পরে হত্যাকান্ডকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে মরদেহ দুটি রান্নাঘরে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর কনার মন্ডল মাছ ধরার অযুহাতে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। পরে শনিবার রাতে কনার মন্ডলের ভাড়া নেয়া কুলটিয়া গ্রামের ফাল্গুন মন্ডলের বাড়ির রান্নাঘর থেকে স্ত্রী পিয়া মন্ডল ও একমাত্র কন্যা কথার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এবং ঐ রাতেই কনার মন্ডলকে আটক করে পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী কনার মন্ডলের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী পিয়া মন্ডল (২৩) ও তিন বছরের কন্যা সন্তান কথা মন্ডল হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে বুধবার দুপুরে নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে যশোর-খুলনা মহাসড়কে নিহতের পরিবার, ইউনিয়নবাসী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।স্ত্রী-কন্যা হত্যাকারীর বিচার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ও ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান তারু, পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক শীতল কান্তি মন্ডল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আলম প্রমুখ।বক্তারা বলেন, মণিরামপুরের সুজাতপুর গ্রামের ননি গোপাল মন্ডলের ছেলে মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক কনার মন্ডলের ভাড়া বাসার রান্নাঘর থেকে শনিবার রাতে স্ত্রী পিয়া মন্ডল ও একমাত্র কন্যা কথার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কনার মন্ডলের পরকীয়ার বিষয়টি স্ত্রী পিয়া জানতে পারায় তাকে ও তিন বছরের কন্যাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। পরে হত্যাকান্ডকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে মরদেহ দুটি রান্নাঘরে ঝুলিয়ে রাখে। ঘাতক কনার মন্ডলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন বক্তারা।মানববন্ধন শেষে কনার মন্ডলের শাস্তির দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুর রহমানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।প্রসঙ্গত গত ৭ আগস্ট শনিবার যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া গ্রামের ফাল্গুন মন্ডলের বাড়ির রান্না ঘর থেকে একই দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় কলেজ শিক্ষক কনার মন্ডলের পাচঁ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী পিয়া মন্ডল ও মেয়ে কথা মন্ডলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, শিক্ষক কনার মন্ডলের সাথে একাধিক নারীর পরকীয়ার সম্পর্কের জেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে একই দড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।পুলিশ জানায় শনিবার রাতেই পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে রোববার (৮ আগস্ট) ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুজাতপুর গ্রামের ননি মন্ডলের ছেলে মশিয়াহাটী ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক কনার মন্ডল স্ত্রী পিয়া ও মেয়ে কথাকে নিয়ে কুলটিয়া গ্রামে ফাল্গুন মন্ডলের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।এদিকে শিক্ষক কনারের স্ত্রী ও কন্যার মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার পিয়া মন্ডলের ভাই চন্দন মন্ডল বাদী হয়ে মণিরামপুর থানায় ৩০৬ ধারায় মামলাটি করেন। পুলিশ শনিবার রাতেই স্বামী কনার মন্ডলকে আটক করেছে।এদিকে মামলার তদন্তকারী অফিসার উপ-পরিদর্শক নেহালপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আতিকুর রহমান বলেন, কনার মন্ডলের সাথে একাধিক নারীর পরকীয়া রয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিন চরম দ্বন্দ্ব চলছিল। এক পর্যায়ে হতাশা থেকে স্ত্রী পিয়া মন্ডল আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সাথে তিন বছরের মেয়ে কথা কেউ একই পথে নিয়েছে তার মা।পিয়ার মা শিপ্রা মন্ডল জানিয়েছেন, তার জামাই কনার মন্ডল একাধিক নারীর সাথে পরকীয়া করতো। এসব ঘটনা নিয়েই মেয়ে পিয়া প্রতিবাদ করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। এমনকি গত দু’বছর আগে এসব ঘটনা নিয়ে মেয়ে পিয়া আমার বাড়িতে চলে আসে। এক পর্যায়ে কনারের জোরজবরদস্তি ও অনুরোধে তাকে (পিয়াকে) পুনারয় তাদের সংসারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, পিয়া পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। কিন্তু কোনভাবেই তাকে বাঁচতে দিলোনা কনার। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
৭ views