জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ যশোরের বাঘারপাড়ার আলোচিত ছয় অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীকে আটক করেছে পুলিশ। আটকের পর তাদের ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল ১ এ সোপর্দ করা হয়েছে। যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি ও বাঘারপাড়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে আটক করে বহুলালোচিত ছয় যুদ্ধাপরাধীকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি করা এক মামলায় ওই ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।আটককৃতরা হচ্ছে বাঘারপাড়ার আবুল হোসেন, হোসেন আলী, আবু বক্কর, আগড়া গ্রামের লুৎফর রহমান, খয়বার রহমান ও নুর ইসলাম। তাদের আটকের খবরে সন্তোষ বিরাজ করছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। কুখ্যাত ওই ছয় জনের আটকের ঘটনা ট্যক অব দি যশোর ছিল।একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয় উপরে উল্লেখিত অভিযুক্ত ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে। মামলার পর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মামলা চলমান ও বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে ২১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে গত ২৩ অক্টোবর তা যশোর জেলা পুলিশের কাছে আসে। জেলা পুলিশের উর্ধ্বতনরা আটকাদেশ তামিল করতে গোয়েন্দা শাখা ডিবি ও বাঘারপাড়া থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেন। ২৪ অক্টোবর ডিবির অফিসার ইনচার্জ রুপন সরকার ও বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দিনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে উপজেলার বিভিন্ন স্পট থেকে আটক হয় ওই যুদ্ধাপরাধীরা। ওইদিনই তাদের ঢাকা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।ওই অভিযুক্ত রাজাকারদের আটক ও তাদের ঢাকায় পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দিন। এ ব্যাপারে আরো তথ্যের জন্য যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকারের সরকারি মোবাইল ফোনে কয়েক দফা ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন পিপিএম জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ৫ জুন অভিযুক্ত রাজাকার আবুল হোসেনসহ ১০/১২ জন স্বশস্ত্র রাজাকার বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধর পক্ষে অবস্থান নেয়া লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারীদের নিশ্চিহ্ন করতে হামলা করে। উপজেলার ইন্দ্রা গ্রামে তাদের তান্ডবে লোকজন ভয়ে লুকাতে থাকে। এসময় ওই রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, কাওছার আলী, ইকরাম আলী ও আজিবর বিশ্বাসের বাড়িসহ ১০/১২টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধার সংগঠক আশেক আলীকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে বাঘারপাড়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায়। ওই দিন রাতে মুক্তিযোদ্ধা আশেক আলীকে পাশের চিত্রা নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।এদিকে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের বহুলালোচিত রাজাকার আকবর আলী শেখসহ ওই এলাকার রাজাকারদের নিয়ে ২৫ অক্টোবর ঢাকা ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান এম সানাউল হক।তিনি বলেছেন, সাতক্ষীরা জেলার চার আসামির মধ্যে আকবর আলী শেখকে আটক করা হয়েছে। বাকি তিন আসামি পলাতক। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম জেলার ১৩ জনের মধ্যে ১১ আসামিকে আটক করা হয়েছে। বাকি দুজন পলাতক।তিনি আরো জানান, মামলায় তিন খণ্ডে ৩৭৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি।ওই সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার শিগগিরই প্রকাশ্য আদালতে শুরুর দাবিও জানিয়েছেন তিনি। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর বিচারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা উচিত। ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হলেও বিচার শুরু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা।
৫ views