রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || মঙ্গলবার | ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
যশোরে পাট চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা
জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোরে প্রতিনিধি,দৈনিক শিরোমণিঃ দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক কৃষিজাত পন্য সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের সোনালী দিনের হাতছানিতে কৃষকেরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকছে। কৃষিজাত ফসল/পন্য উৎপাদনের দিক থেকে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা বেশ প্রসিদ্ধ। সেই সাথে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে বিবেচিত সোনালী আঁশ পাট চাষ বরাবরই অত্র উপজেলার কৃষকেরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চাষ করে থাকেন।আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা কম থাকলে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। সেই আলোকে বিগত কয়েক বছর ধরে বহু কৃষক পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু গত বছর পাটের বাজারদর বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশাতিত মূল্য পেয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় মণিরামপুর উপজেলার কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রি করে উচ্চমূল্য পেয়ে বেশ লাভের মুখ দেখেছেন। সেই কারণে চলতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে কৃষকেরা পাট চাষ করেছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৭টি ইউনিয়নে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৫হাজার ১’শ৫০ হেক্টর জমিতে। যা বিগত বছরের তুলনায় কয়েক’শ হেক্টর জমি বেশি হবে বলে সুত্র জানায়। উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের হালসা গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, তিনি অধিক লাভের আশায় বোরো ধান কেটে প্রায় এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বার তিনি কোন জমিতে পাট চাষ করে নাই বলে জানান। ওই ইউনিয়নের শ্যামকূড় গ্রামের সফল পাটচাষি আব্দুল হামিদ এবং তার ভাই নজরুল ইসলাম বিগত বছরের মতো এবারও তাদের নিজস্ব ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। গতবার ভাল দাম পেয়ে এবার আগে ভাগে সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে তারা পাট করেছেন। এখন তাদের আবাদকৃত পাট গাছে-পাতায় বেশ ভাল হয়েছে বলে তারা জানান। উপজেলার ভোজগাতি ইউনিয়নের টুনিয়াঘরা গ্রামের সফল চাষি বজলুর রহমান জানান, গত বছর তিনি কোন জমিতে পাট চাষ করে নাই। এবার তিনি বোরো ধান কেটে বিনা চাষে দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তার আবাদকৃত পাটের বয়স একমাস পূর্ণ হয়েছে। তার জমির পাট গাছে পাতায় অনেক ভাল বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, তাদের গ্রামের পশ্চিম বিলে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক এবার বোরো ধান কেটে পাট চাষ করেছেন। পাশের দোনার গ্রামের সফল নারী কৃষাণী নাসিমা খাতুন আমাদের প্রতিবেদক জেমস আব্দুর রহিম রানাকে জানান, তিনি অধিক লাভের আশায় এবার নতুন করে ১৮ কাঠা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তার এই জমিতে গত বছর তিনি তিল চাষ করেছিলেন। ভোজগাতী গ্রামের কৃষক রাসেল উদ্দীনও এবার বোরো ধান কেটে প্রায় দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পাটের বাজার দর সন্তোষজনক হওয়ায় অর্থাৎ কৃষকেরা মন প্রতি ৪হাজার থেকে শুরু করে ৬ হাজার ও ক্ষেত্র বিশেষ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষকরা বিক্রি করেছেন। যে সব কৃষক একটু দেরিতে পাট বিক্রি করেছেন তারা বেশী লাভবান হয়েছেন বলে সুত্রে জানা গেছে। এদিকে বিগত মৌসুমে পাট ব্যবসায়ীরা পাট বিকিকিনি করে মন প্রতি ২ হাজার,৩ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়ে ব্যবসা করেছেন বলে ব্যবসায়ীদেরে কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। কৃষকেরা পাট চাষে আগ্রহী হওয়ায় এই খাতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট উন্নয়ন দপ্তর কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও রাসায়নিক সার বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন। পাট উন্নয়ন দপ্তরের উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আশীষ মন্ডল জানান, মণিরামপুর উপজেলার ১ হাজার ৮৮৫ জন কৃষক-কৃষানী কে পাট চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে উন্নত জাত তোষা পাট-৮(রবি-৫) এর জনপ্রতি এককেজি করে বীজ এবং ১২ কেজি করে তিন ধরনের রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আবুল হাসান বলেন, পাটের ভাল বাজার দর পেয়ে কৃষকেরা পাট চাষে এবার ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ স্ব-স্ব এলাকার চাষীদের পাট চাষ একটি লাভজনক চাষ হিসেবে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। আবহাওয়া ভাল হওয়ায় পাট গাছে-পাতায় ভাল হওয়ায় পাটের উৎপাদন এবার আশাতিত হবে এবংবাজার দর ঠিক থাকলে এই খাত থেকে কৃষকরা বেশি লাভবান বলে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.