মুরাদ মিয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটাকে বলা হয়ে থাকে সম্পদ ও সমৃদ্ধের নদী। যুগ যুগ ধরে এ যাদুকাটাকে ঘিরে লাখো শ্রমজীবী পরিবার খুঁজে নিয়েছে তাদের কর্মসংস্থান। গত এক বছরেরও অধিক সময় ধরে বালু-পাথর উত্তোলন করা নিয়ে আইনি জটিলতা ও উচ্চ আদালতে মামলাজনিত কারণে ইজারা বন্দোবস্ত না হওয়ায় কাজ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন লাখো শ্রমজীবী মানুষ। পাশাপাশি বিপাকে পড়ে এ অঞ্চলের বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা। গত ৮ জুন সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক যাদুকাটা নদীর বালু মহালের ইজারা বৈধ ঘোষণা হয়। রায় শুনে যাদুকাটার শ্রমজীবী মানুষ, ব্যবসায়ীসহ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে। স¤প্রতি সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসিম উদ্দিন ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির সরেজমিনে গিয়ে যাদুকাটা নদীর বালু মহালের সীমানা নির্ধারণ করে তা ইজারা গ্রহিতাদের বুঝিয়ে দেন। শ্রমিকদের সর্দার উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের হাকিকুল মিয়া বলেন, দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নদীতে কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমজীবী পরিবার, ব্যবসায়ীরা ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়েছে। নদীতে কাজ শুরু হবে এ খবর শুনে এখানকার প্রতিটি ঘরে স্বস্তি নেমে আসে। শ্রমিক জসিম উদ্দিন বলেন, এতদিন সংসার চালাতে হয়েছে ঋণ আর সুদে টাকা নিয়ে। এখন নদীতে কাজ করতে পারব এটুকু ভেবে নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস পাচ্ছি। লাউড়েরগড় বালু-পাথর ব্যবসায়ী রইছ মিয়া বলেন, গত এক বছর নদীতে কাজ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছিল। কেউ কেউ লোকসান গুনতে গুণতে আজ অনেকটাই সর্বস্বান্ত। নদীতে কাজ শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ইজারা কার্যক্রমে
অংশগ্রহণ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স নিলম এন্টারপ্রাইজ ও আজাদ হোসেন এন্টারপ্রাইজ প্রায় দশ কোটি (ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ) টাকায় ইজারা প্রাপ্ত হন। ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ায় পর নিয়ম অনুসারে সরকারি কোষাগারে ইজারামূল্য পরিশোধ করলেও অপর একটি পক্ষ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করলে শুনানী শেষে জেলা প্রশাসনের দেয়া ইজারা বন্দোবস্ত এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ইজারাদারগণ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে আবেদন করে এ অঞ্চলের লাখো শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আবেদন শুনানীর দিন ধার্য্য করেন গত ৮ জুন। এদিন উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দেয়া ইজারা বন্দোবস্ত বৈধ বলে ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে ইজারাদারদেরকে যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের সীমানা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, সরেজমিনে যাদুকাটা নদীতে এসে দেখলাম এখানকার শ্রমিকরা নদী থেকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। যারা দীর্ঘদিন বেকার ছিল। শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যতা দেখে খুবই ভালো লাগছে।