রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
রংপুর শহরের ঐতিহ্য হারিয়েছে শ্যামাসুন্দরী
মোঃ সাকিব চৌধুরী, রংপুর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ তিন দশক ধরে রংপুর শহরের মানুষের দুঃখের নাম হয়ে উঠেছে শ্যামাসুন্দরী খাল। বিভাগীয় এ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খালটির উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে আছে অদৃশ্য কারণে। করোনাকালের আগে রংপুরের বিভাগীয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্যোগী হয়ে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও সীমানা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু গত আড়াই বছর ধরে কাজ বন্ধ থাকায় দূষণের পাশাপাশি আবারও এর জায়গা দখলের চেষ্টা চলছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, খালবিল, জলাশয় সংস্কার করে পানির আধার তৈরি করতে হবে। অথচ রংপুর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি খাল দখল ও দূষণের কবলে পড়লেও প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।রংপুর সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, শ্যামাসুন্দরী খালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নিয়োগ করা হয়েছে পরামর্শক। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে।রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৮৯০ সালে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন তার মা শ্যামাসুন্দরীর স্মরণে খালটি খনন করেছিলেন। খালটি রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এলাকাভেদে ২৩ থেকে ৯০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত। খালটি উত্তর-পশ্চিমে কেল্লাবন্দ ঘাঘট নদী থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ঘুরে মাহিগঞ্জ সাতমাথা রেলগেট এলাকায় কেডি ক্যানেল স্পর্শ করে মিশেছে খোকসা ঘাঘট নদীতে।রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগ হওয়ার পর এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেড়েছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এ নগরীতে বসবাস করছে। শ্যামাসুন্দরী খাল ঘেঁষে, খালের জায়গা দখল করে তৈরি হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট ও ঘরবাড়ি। এসবের প্রতিদিনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। পয়ঃনিস্কাশনের সংযোগও রয়েছে খালের সঙ্গে। ফলে দূষিত হয়ে পড়েছে এর পানি। বর্তমানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও মশার কারখানা হয়ে উঠেছে এটি।বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, শ্যামাসুন্দরী খাল আসলে ঘাঘট নদীরই অংশ ছিল। তিস্তার পানি ঘাঘট নদীতে প্রবাহিত হতো। সেই পানি ঘাঘট নদী থেকে রংপুর নগরীর বুক চিরে বয়ে গিয়ে আবার একই নদীতে মিলিত হতো। এক সময় এ নদীতে নৌ-যাতায়াতও ছিল। এজন্য রংপুর নগরীতে নবাবগঞ্জ, মীরগঞ্জ গড়ে উঠেছে। কিন্তু ১৭৮৭ সালের ভূমিকম্পে নদীগুলো খাত পরিবর্তন করে। আর এতেই এক সময় মরে যায় ঘাঘট নদীর এই শাখা। তার পর রাজা জানকী বল্লভ সেন এটিকে খাল হিসেবে পুনঃখনন করে নাম রাখেন তার মা শ্যামাসুন্দরীর নামে।ড. তুহিন বলেন, শ্যামাসুন্দরীকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন পানি প্রবাহের। এজন্য গত ৩০ বছর আগে কীভাবে পানি প্রবাহিত হতো, ঘাঘট থেকে শ্যামাসুন্দরীতে কেন তা আর প্রবাহিত হচ্ছে না, কোথায় কোথায় এই পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। বর্ষায় বেশি বৃষ্টিপাত হলেই অনেক এলাকায় পানি হাঁটু-বুক কিংবা তার চেয়ে বেশি উচ্চতায় উঠে যায়। শ্যামাসুন্দরী খালের দূষণ অন্য নদীতেও ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মাছসহ নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে।সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়ন সংস্কার, পুনরুজ্জীবিতকরণ নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা সভা ও সেমিনার হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, খালবিল, জলাশয় সংস্কার করে পানির আধার তৈরি করতে হবে। অথচ রংপুর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি খাল দখল ও দূষণের কবলে পড়লেও প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মিঞা বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করতে চেয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে সেটি এখনও করা যায়নি। আশা করি, সেটি হলে দ্রুত শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত করার কার্যক্রম আবারও শুরু হবে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.