লিয়াকত রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহীর ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার বিকাল ৪টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। রাজশাহী মহানগরীর মঠপুকুর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা বুধবার বিকাল ৪টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। এ সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিল্লাল উদ্দিন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু তাকে ফোন করেন যে, বেসরকারি বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। খবর পাওয়ার পর চিকিৎসক প্রস্তুত থাকেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা গেছেন।
ডা. বিল্লাল উদ্দিন জানান, পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন- ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার বুকেও ব্যাথা ছিল। এছাড়া বার্ধক্যজনিত অন্যান্য সমস্যাও ছিল। গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছিল। অসুস্থ হবার পর তার করোনার পরীক্ষা করা হয়নি।
ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বায়ান্নো পরবর্তী প্রগতিশীল সব আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও কিছু দিন আগে তিনি রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রাজশাহীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের বাসায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উপহার দিয়ে আসেন।
ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন মৃত্যুকালে দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেলেন। তার স্ত্রী আগেই মারা গেছেন। আবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তারা আবুল হোসেনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তারা বলেছেন, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের যে অবদান তা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
৫ views