গুঞ্জনকে সত্যি করে টেস্ট থেকে অবসরই নিয়ে ফেললেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিন ফিল্ডিংয়ে নামার সময় সতীর্থরা তাকে গার্ড অব অনার জানায়। টিভি ধারাভাষ্যকাররাও তার অবসরের খবরটি নিশ্চিত করে। তবে শেষ টেস্টে মাহমুদউল্লাহকে বঞ্চিত করেনি বাংলাদেশ। ২২০ রানে বড় জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।
জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য ছিল ৪৭৭ রানের। জিততে হলে বিশ্বরেকর্ডই গড়তো হতো। বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনা কার্যত ছিল না, তবে হারারের উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে থাকায় ড্র করার চেষ্টা ছিল জিম্বাবুয়ের।
শেষ দিনে স্বাগতিকদের হাতে ছিল ৭ উইকেট, দরকার ৩৩৭ রান। যে কোনো পিচেই কঠিন লক্ষ্য। জিম্বাবুয়ে সেই লক্ষ্য তাড়া করার চেষ্টাও করেনি।
বরং ১৬৪ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ড্রয়ের অসাধ্য সাধন করার চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। শেষ তিন উইকেটে তারা ৩৪.৩ ওভার কাটিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
অবাক করার বিষয় হলো, পঞ্চম দিনে জিম্বাবুয়ের এই লড়াকু মানসিকতায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে আগের দিন ব্যাটিংয়ে নামা ডোনাল্ড তিরিপানো।
হাতে মাত্র ৩ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ে যখন নিশ্চিত হারের মুখে। তখন মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন তিরিপানো। সঙ্গী যাকেই পেয়েছেন, ওভার কাটানোর চেষ্টা করেছেন।
শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা থেমেছে এবাদত হোসেনের শিকার হয়ে। ১৪৪ বল মোকাবেলায় ৬ বাউন্ডারিতে ৫২ রান করে তিরিপানো দিয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ। তারপর বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। রিচার্ড এনগারাভাকে (১০) বোল্ড করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ব্লেসিং মুজারবানি ৩০ রানে অপরাজিত থেকে যান।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তাসকিন আহমেদ আর মেহেদি হাসান মিরাজ-দুজনই নিয়েছেন ৪টি করে উইকেট। বাকি দুই উইকেটের একটি সাকিব আল হাসান, অপরটি এবাদতের।
ডিওন মায়ার্স এবং ডোনাল্ড তিরিপানো ব্যাট করতে নামেন পঞ্চম দিনে। মায়ার্স ১৮ এবং তিরিপানো ছিলেন ৭ রানে অপরাজিত। শেষ দিন আজ ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আউট হয়ে যান মায়ার্স। নামের পাশে কেবল ৮ রান যোগ করতে সক্ষম হন তিনি। ২৬ রান করে আউট হন তিনি মিরাজের বলে।
এরপর মাঠে নেমেই একই ওভারে মিরাজের শিকারে পরিণত হন তিমিসেন মারুমা। নামের পাশে কোনো রানই যোগ করতে পারেরনি তিনি। এরপর ব্যাট করতে নামেন রয় কাইয়া। ৫টি বল খেলতে পারলেও কোনো রান করতে পারেননি। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান তাসকিনের বলে।
রেগিস চাকাভা মাঠে নেমে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন ডোনাল্ড তিরিপানোর সঙ্গে। কিন্তু তার জুটিও টেকার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। কারণ, তাসকিন আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে যান চাকাভা, করেন মাত্র ১ রান। ৭ উইকেটে ১৭৬ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।
লাঞ্চের পরও অনেকটা সময় বাংলাদেশকে উইকেটের জন্য অপেক্ষায় রাখেন ডোনাল্ড তিরিপানো আর ভিক্টর নিয়াচি। ১৫ ওভারের বেশি উইকেটে কাটিয়ে দেন তারা। যোগ করেন ৩৪ রান।
শেষ পর্যন্ত এই জুটিটি ভেঙেছেন বল হাতে আগুন ঝরানো তাসকিন। ডানহাতি এই পেসারের দ্রুতগতির এক শর্ট ডেলিভারি বুঝতে না পেরে বুক সমান উচ্চতায় ব্যাট ধরে দেন নিয়াচি।
বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপে। সেখানে সাকিব প্রথম দফায় হাত ফস্কালেও পরের চেষ্টায় ধরে ফেলেন ক্যাচটি। জিম্বাবুইয়ান লোয়ার অর্ডারের ৫৪ বলে ১০ রানের প্রতিরোধ ভাঙে তাতে।
নিয়াচি ফেরার পর আবার ব্লেসিং মুজারবানিকে নিয়ে ১৩ ওভারের বেশি কাটিয়ে দেন তিরিপানো। তবে আর পারেননি। ১৪৪ বলে ৫২ রান করে জিম্বাবুইয়ান নাইটওয়াচম্যান এবাদতের শিকার হওয়ার পর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৯৪.৪ ওভারে অলআউট হয়েছে ২৫৬ রানে।
এর আগে জিম্বাবুয়েকে জয়ের জন্য ৪৭৭ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান তোলে স্বাগতিকরা। ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ৭৩ বলে ৯২ রান করেন ব্রেন্ডন টেলর। তিনি ছাড়া টপঅর্ডারের বাকি ব্যাটসম্যানরা ভয় ছড়াতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪৬৮/১০ (মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, লিটন দাস ৯৫, তাসকিন আহমেদ ৭৫, মুমিনুল হক ৭০, সাদমান ইসলাম ২৩; ব্লেসিং মুজারবানি ৪/৯৪)
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ২৭৬/১০ (তাকুজওয়ানাশে কাইতানো ৮৭, ব্রেন্ডন টেলর ৮১, রেগিস চাকাভা ৩১*; মেহেদি মিরাজ ৫/৮২, সাকিব আল হাসান ৪/৮২)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ২৮৪/১ ডিক্লে. (সাদমান ইসলাম ১১৫*, নাজমুল হোসেন শান্ত ১১৭*, সাইফ হাসান ৪৩)
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস : ২৫৬/১০ (ব্রেন্ডন টেলর ৯২, ডোনাল্ড তিরিপানো ৫২; মেহেদি মিরাজ ৪/৬৬, তাসকিন আহমেদ ৪/৮২)
ফল : বাংলাদেশ ২২০ রানে জয়ী।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]