পোশাকের কারণে নরসিংদীর রেলস্টেশনে মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার ওই তরুণী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এখন তিনি এক ধরনের ট্রমার মধ্যে আছেন। এই ঘটনার বিচার চাইতেও ভয় পাচ্ছেন। হেনস্তার শিকার হয়ে উল্টো সোশ্যাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক মানসিকতায় বিশ্বাস করেন এমন গোষ্ঠীর বুলিং ও ট্রলের শিকার হন কিনা, আছেন সেই আতঙ্কেও। জামালের মাখানো মুড়ি খেতে নরসিংদী যান ওই তরুণী। তিনি পড়াশোনা করছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। নরসিংদীতে বেড়ানোর সময় তাঁরা মোট চার বন্ধু ছিলেন। এর মধ্যে দু’জনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। গতকাল দু’জনের সঙ্গে কথা হয়।তাঁরা জানান, এমন ঘটনা ঘটতে পারে এটা কল্পনারও বাইরে ছিল তাঁদের। বিশেষ করে দুই নারী যখন ঘটনার সূত্রপাত করেন, এটা তাঁদের বিস্মিত করে। ওই দুই নারী প্রথমে তাঁদের বান্ধবীর পোশাক নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। এরপর কয়েকজন পুরুষসহ নারীরা তাঁদের মারধর করেন। শুধু তাই নয়, উল্টো তাঁদের দিয়ে হেনস্তাকারী ওই নারীদের কাছে জোরপূর্বক ক্ষমা চাওয়ানো হয়। মারধার করে ওই দুই নারীর পায়ের কাছে মাথা নিচু করে বসিয়ে রাখা হয়।ওই ঘটনার চারটি সিসিটিভির ফুটেজ ও ভিডিও চিত্র সমকালের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, জিন্স প্যান্ট ও টপস পরার কারণে নরসিংদী রেলস্টেশনে ভয়াবহ হেনস্তা, লাঞ্ছনা এবং মারধরের শিকার হয়েছেন এক তরুণী।এতে দেখা যায়, পোশাকের কারণে ওই তরুণীকে স্টেশনে অপেক্ষমাণ দুই নারী প্রথমে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন। মধ্যবয়সী ওই দুই নারীর পরনে ছিল সালোয়ার-কামিজ। এরপর তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন আরও কয়েক ব্যক্তি। লাঞ্ছনার শিকার ওই তরুণী বারবার বলতে থাকেন- ‘এটা তো স্বাধীন দেশ। আমার পোশাক নিয়ে কেন আপনারা এভাবে কথা বলছেন। দেখতে তো আপনাদের ভদ্র মনে হয়।’এরপর ওই নারীসহ আরও কয়েকজন চড়াও হন তাঁর ওপর। ওই তরুণীর সঙ্গে বন্ধুদের মারধর শুরু করেন মধ্যবয়সী এক লোক। লাল টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি পেছনে গিয়ে ওই তরুণীকে আঘাত করতে থাকেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তাঁরা দৌড়ে রেলের স্টেশন অফিসারের কক্ষের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পেছনে পেছনে দৌড়ে ওই তরুণীকে ধরার চেষ্টা করেন কয়েকজন। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লাঞ্ছনাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই ঘটনার পরই স্টেশন মাস্টার আতঙ্কে এলাকা ত্যাগ করেন। গতকাল পর্যন্ত তিনি কাজেও যোগ দেননি।