২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। সেদিন টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) এই ফরম্যাটে নিজেদের ১০০তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রতিপক্ষ সেই জিম্বাবুয়ে। অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীসের মতো এই ম্যাচেও জয়ের স্বাদ এনে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের শততম ম্যাচটি জয়ে রাঙাল বাংলাদেশ দল।
জিম্বাবুয়ের ছুড়ে দেওয়া মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। তবে শুরুতে কিছুটা সাবধানী ছিলেন দুজনেই। কিন্তু চতুর্থ ওভারে এনগ্রাভার বলে তিন চার মেরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নাঈম। ধীরে ধীরে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন সৌম্যও। দুই ওপেনারের সাবধানী ব্যাটিংয়ে প্রথম ৬ ওভারে ৪৩ রান তোলে বাংলাদেশ। ১০ ওভারে শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৬ রানে।
সৌম্য ও নাঈম প্রয়োজনীয় রান রেট কখনোই হাতের নাগালের বাইরে যেতে দেননি। সৌম্য একসময় হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু সিঙ্গেল নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের চতুর্থ ফিফটি পূর্ণ করার পর দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউটের শিকার হন তিনি। বিদায়ের আগে চার বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৫ বলে ঠিক ৫০ রান করেন সৌম্য। প্রথম উইকেট হারানোর আগেই অবশ্য ১০০ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশের সংগ্রহ।
১৫তম ওভারর চতুর্থ বলে অল্পের জন্য রান আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান নাঈম। দ্বিতীয় রান নিতে দৌড়ে ক্রিজের মাঝপথে গিয়ে ফিরে আসেন তিনি। পরে অ্যাঙ্কেলে চোট নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি। পরের ওভারেই অবহস্য ফিফটি তুলে নেন এই তরুণ ওপেনার। ৪০ বল খেলে ৪ চারে সাজানো এই ফিফটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয়।
সৌম্যর পর ক্রিজে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এসেই বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পরে একবার নিজে এবং আরেকবার নাঈমকে রান আউটের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম দুই বার কোনো বিপদ না ঘটলেও তৃতীয়বার মুজারাবানির সরাসরি থ্রোয়ে ব্যক্তিগত ১৫ রানে নিজেই রান আউট হয়ে ফেরেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে থাকানে বাংলাদেশের ওপর।
শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ২৭ রান। এনগ্রাভার করা চতুর্থ ও ইনিংসের ১৮তম ওভারে নাঈম ও নুরুল হাসান সোহান মিলে তোলেন ১৬ রান। ফলে লক্ষ্য টাইগারদের হাতের মুঠোয় চলে আসে। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সেই লক্ষ্য ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এনে ফেলেন সোহান। এরপর ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন নাঈম।
এর আগে টসে জিতে শুরুতে ব্যাটিং করতে নামে জিম্বাবুয়ে। এক পর্যায়ে ১১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৯১ রান তুলে ফেলেছিল তারা। কিন্তু এরপর ১৫তম ওভারে গিয়ে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেট ১১৯ রান। চাকাভা এবং মাধেভেরে যতক্ষণ ব্যাটিং করছিলেন, জিম্বাবুয়েই ছিল চালকের আসনে। তবে মায়ার্সও ভালো ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু মোস্তাফিজের ৩ উইকেট আর শেষদিকে বার্লকে বিদায় করে দেওয়া শামিম হাসানের দুর্দান্ত ক্যাচ মিলিয়ে স্বাগতিকদের ইনিংস ১৫২-তেই থেমে যায়।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জিম্বাবুয়ের দলীয় ১০ রানেই প্রথম আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মেরেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তাদিওয়ানাশে মারুমানি (৭)। পঞ্চম বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন। তবে পাওয়ার প্লেতে ৫০ পেরিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। আরেক ওপেনার মাধভেরেকে ফেরান সাকিব। নবম ওভারে এসে তিনি ২৩ বলে ২৩ রান করা এই ওপেনারকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন।
নিয়মিত উইকেট পতনের মাঝেও জিম্বাবুয়ের রানের গতি কমেনি। ১০ ওভারেই তাদের স্কোর ৯০ হয়ে যায়। বিধ্বংসী ব্যাট করছিলেন রেগিস চাকাভা। ২২ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৪৩ রান করা এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যন রান-আউট হয়ে যান। ৯১ রানে তৃতীয় উইকেট পতন। ১ রানের ব্যবধানে আঘাত হানেন শরীফুল। বিপজ্জনক অল-রাউন্ডার সিকান্দার রাজা ফিরে যান কোনো রান না করে।
এরপর সৌম্য সরকারের করা ইনিংসের চতুর্দশ ওভারের দ্বিতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দেন তারিসাই মুসাকান্দা (৬)। এরপর পরের ওভারের প্রথম বলেই শরিফুলে ইসলামের বলে বোল্ড হন ২২ বলে ২ চারে ৩৫ রান করা ডিয়ন মায়ার্স। ১১৯ রানে ৬ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এরপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে লুক জঙওয়ে করেন ১৬ বলে ১৮ রান।
সাইফউদ্দিনের ওই ওভারেই স্বাগতিকরা বড় ধাক্কা খায়। বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান রায়ান বার্ল লং-অনে বেশ জোরে তুলে মেরেছিলেন। কিন্তু বদলি ফিল্ডার শামিম হোসেন বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বল তালুবন্দি করেন। দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে ফেরার আগে বার্ল করেন মাত্র ৪ রান।
চাপে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে ১৯তম ওভারে হারায় শেষ দুই উইকেট। টেল এন্ডার ব্যাটসম্যান এনগারাভাকে সরাসরি বলে বোল্ড করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এর এক বল পরে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকানোর পর মুজারাবানিও বোল্ড হয়েই ফেরেন।
বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ২টি করে উইকেট গেছে সাইফউদ্দিন ও শরিফুল ইসলামের ঝুলিতে। আর ১টি করে উইকেট নিয়েছে সাকিব ও সৌম্য।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]