সুমন, নীলফামারী প্রতিনিধি:নীলফামারীর ডিমলায় দরিদ্র কয়েক কৃষক পরিবার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রণোদনার আওতায় রোপন করা প্রায় ৩ একর (১০বিঘ) জমির গম ক্ষেতে শত্রুতা করে আগাছানাশক বিষ স্প্রে করা হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকগণ ও তার পরিবার। গত ১৯ জানুয়ারি গভীর রাতে উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা (কলেজ পাড়া) গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী জহুরুল ইসলামের দাবি, গত ১৯ জানুয়ারি রবিবার সকালে পার্শ্ববর্তী নাউতারা ইউনিয়নের আকাশকুড়ি গ্রামে বসবাস করে আমার ছোট ভাই আব্দুস সালাম। ঐদিন তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। আমরা পরিবারের সকলে একসঙ্গে ওই ভাতিজির বিয়ের অনুষ্ঠানে চলে যাই। এই সুযোগে গভীর রাতে গমের ক্ষেতগুলোতে আগাছানাশক বিষ প্রয়োগ করে। এর ৩/৪ দিন পর ক্ষেতের গম গাছগুলো পুড়ে হলুদ বর্ণ হয়ে শুকিয়ে যায়। আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি, হয়তো অন্য কোন ছত্রাকে আক্রমণ করেছে। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসে জানালে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গমের ক্ষেত পরিদর্শনে আসেন। ক্ষেতের গাছ দেখে তিনি বলেন গত কয়েকদিন আগে গমের ক্ষেতে আগাছানাশক বিষ স্প্রে করা হয়েছে। তাই গমের গাছগুলো পুড়ে হলুদ বর্ণ হয়ে শুকিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষকদের নাম মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে জহুরুল ইসলাম, মৃত কেরামত আলীর ছেলে বাদশা মিয়া, মো. সিরাজ মিয়ার ছেলে কালু মিয়া, হযরত আলীর স্ত্রী সালেহা খাতুন, মৃত শামসুল মিয়ার ছেলে রশিদুল ইসলাম, মো. ওসমান গনির ছেলে নুর আলম ও আবু সাঈদের স্ত্রী পিয়ারী বেগম। তারা সকলেই একই এলাকার ছোটখাতা (কলেজ পাড়া) গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা।স্থানীয়রা জানান ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জহুরুল ইসলাম হতদরিদ্র। সংসারের অভাব-অনটন ঘোচানোর জন্যে স্ত্রী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে গম চাষাবাদ করেন। ইতিমধ্যে গমের গাছগুলোও তরতাজা টগবগে হয়ে উঠেছিল। তার মধ্যেই এই ক্ষেতে আগাছানাশক বিষ স্প্রের ঘটনা ঘটল।জহুরুল, বাদশা, কালু, নুর আলম ও পিয়ারী বেগম এই ঘটনার জন্য প্রতিবেশী আব্দুল মজিদ ও তার ভাই আব্দুর রউফকে দায়ী করেছেন। তারা বলেন, তাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন ধরে জমা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বিরোধ মীমাংসা করে দিলেও তারা তা মানেননি। উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। সেই বিরোধের জেরে প্রায় তিন একর জমির গম ক্ষেতে বিষ স্প্রে করা হয়েছে। জমা-জমি নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে! তাই বলে আমাদের গম ক্ষেত এভাবে বিষ স্প্রে করে জ্বালিয়ে দিবে! এটা কোনো সচেতন মানুষের কাজ হতে পারে না কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিচার চেয়ে বলেন পিয়ারী বেগম।ক্ষতিগ্রস্ত পিয়ারী বেগম এই ঘটনার জন্য দুই ভাইকেই দায়ী করে বলেন, “জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তারা তো আমাদেরকে আবারো বলতে পারত, আমরা বসে সেটি সমাধান করতাম। কিন্তু তা না করে তারা আমাদের ক্ষেতে আগাছানাশক বিষ স্প্রে করেছে।স্থানীয় প্রতিবেশী আব্দুস সামাদ বলেন, জমা-জমি নিয়ে গন্ডগোল থাকতেই পারে, ক্ষেতের সঙ্গে কিসের শত্রুতা? এর উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।তিস্তা ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আইরিন আক্তার (১৮) তিনি বলেন, ভালো একটা ফসল এভাবে নষ্ট হলো, যারাই করেছে আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত দুই ভাইকে ফোন দিলও তারা ফোন ধরেননি। তাই তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে।ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলে এলাহী বলেন, ক্ষেতে আগাছানাশক স্প্রে করে গম নষ্ট করার একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]