সাজ্জাদ স্বদেশী, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি: বৈশাখী মেলা বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের শুরুর মাস বৈশাখমাসে আবহমান বাংলায়, শতবর্ষী মন্দির,বিশালাকার বটবৃক্ষের ছায়াতলে, কিংবা শান্ত নদীর পাড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মেলা বসে। বৃদ্ধ, আবাল, বনিতা, হিন্দু মুসলমান সকলের অংশগ্রহণে জমে ওঠে মেলা। বাঙ্গালি সংস্কৃতির সেই ধারা আজও রক্ষা করে চলেছে শরীয়তপুরের মহিষার ইউনিয়নের সংস্কৃতিমনা জনগন। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলাধীন মহিষার ইউনিয়নের শ্রী শ্রী দিগম্বরী মাতাঠাকুরানী মন্দির প্রাঙ্গনে শতো শতো বছর যাবৎ ব্যাপক উৎসব ও উদ্দীপনায় বসে বৈশাখী মেলা। ৭ দিন ব্যাপী মেলা ও হিন্দু ধর্মাবল্বীদের পূজা উদযাপন হয় সুবিশাল শতোবর্ষী কড়াই গাছের নিচে । প্রতি বছর বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসের ৭ দিন স্থায়ী, এ মেলায় নববর্ষের আমেজ নিতে আসে জেলার বিভিন্ন উপজেলার উৎসব প্রিয় মানুষজন। ১৫ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার থেকে শুরু হয় হিন্দু পঞ্জিকা মেনে পূজার্চনা ও মূল কার্যক্রম। সেদিন থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিখ্যাত এই মন্দির প্রাঙ্গনে ভীড় জমাতে শুরু করেন, ধর্মভীরু হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দরা। সপ্তাহের মঙ্গলবারে মহাউৎসবে পূজিত হয় মাতাঠাকুরানীর মনসা মন্দির। মন্দির প্রাঙ্গনের পাশের সুবিশাল দীঘিতে দুধ ঢেলে পূজা করেন ভক্তবৃন্দ। তাদের বিশ্বাস এতে তাদের রোগবালাই ও জাগতিক মঙ্গল সাধিত হয়। মন্দির প্রাঙ্গনে সাতদিন ব্যাপী এ মেলায় বসে নানান রকমের দোকান, মাটির খেলনা, হরেক রকম মণিহারী পণ্য, বাঁশের তৈরি লোকজ শিল্পের বিভিন্ন পণ্য, গ্রামীন জীবনে গায়ের বধুদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র। মেলা শুরু হয় সকাল ৭ টায় শেষ হয় সন্ধ্যার পরপরই। মেলা প্রসঙ্গে মন্দির কমিটির সদস্য ও মহিষার দিগম্বরী স্কুল এন্ড কলেজের অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, সুনীল কৃষ্ণের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, এ মেলা কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এ মেলা শরীয়তপুর জেলার ঐতিহ্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রানের উৎসব। মেলায় ঘুরতে আসা মোহাম্মাদ হাশেম নামের এক বৃদ্ধের কাছে দৈনিক শিরোমণি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বহু বছর ধরে আমরা এলাকার মুসলমানরা সহ দূরদূরান্তের অনেক মুসলমান মেলায় আসেন। মোহাম্মাদ শুভ নামের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র বলেন, প্রতিবছরই আমরা মেলায় ঘুরতে আসি কেনাকাটা করি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভেদরগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দেয়। দ্বায়িত্বরত এএসআই জনাব দেলোয়ার জানান ৬ জন পুলিশ সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আইনশৃঙ্খলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যায়। কোনোও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত কোনোও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়নি, এলাকার মানুষজন খুবই উৎসব প্রিয়।মেলায় বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসা দোকানীদের কাছে দৈনিক শিরোমণি জানতে চাইলে তাদের কয়েকজন বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি, তার কিছুটা প্রভাব পরেছে ব্যবসায়, আগের চাইতে অনেক কম মানুষই আসেন। উৎসবপ্রিয় আগত অতিথিরা বলেন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই মেলা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, সারা জেলা ও সারাদেশের সংস্কৃতিমণা মানুষের প্রানের উৎসব।