মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : দীর্ঘকাল ধরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ অঞ্চলে বাঁশের বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী তৈরি হয়ে আসছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এলাকায় সরবরাহ করা হতো এসব পণ্য। কিন্তু বাঁশের মূল্যবৃদ্ধি এবং যে, অনুপাতে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পাওয়ার সৃষ্টি সংকট। ফলে এ পেশার ১০ থেকে ১৫ হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। অর্থ কষ্টে এসব পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে ও বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে টিকে থাকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। বিগত বছর তিনেক হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর চুনারুঘাট থানার বিভিন্ন এলাকায় বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করা হতো। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বাঁশের মোড়া, ডালা, কুলা, দোলনা, চেয়ার র্যাক, ঝুড়ি, চাটাই, কলমদানী, ফুলদানী, কলমদানী, বাঁশি কিংবা গৃহসজ্জায় বাহারি পণ্য বিক্রয় করে সংসার চলে তাদের। এভাবেই এ অঞ্চলে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সহ¯্রাধিক পরিবার। কিন্তু একে একে বিলিন হচ্ছে প্রয়োজনীয় এই বাঁশ ও বাঁশঝাড়। এর জন্য কৃষি বিভাগ উদ্যোগের প্রয়োজন মনে করলেও বাস্তবে নিচ্ছেন না কোন উদ্দৌগই। নেই সরকারি বেসরকারি কোন প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা। হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থানার লাদিয়া গ্রামের এলাকার মানিক মিয়া (৪৫) জানান, বংশপরম্পরায় কয়েক পুরুষ ধরে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে তার পরিবার। শায়েস্তাগঞ্জ থানা ও পৌর অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে উৎপাদিত বাঁশের পণ্য পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চলে তার। স্ত্রী ছেলেমেয়েসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার চলে এই বাঁশ শিল্পের উপর। নিজ বাড়িতে তৈরি করেন ঝুড়ি, ডালা, কুলা, মোড়া, সোফা ও দোলনাসহ অন্যান্য সামগ্রী। এর পর তা শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু ঐসব পণ্য তৈরি করতে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত তল্লা বাঁশের তীব্র সংকট দেখা যায় আবার অনেক চড়া দামে কিনতে হয়। তিনি জানান, একেকটি তল্লা বাঁশ কয়েক বছর আগে ও ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তা এখন কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। সে অনুপাত উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ছে না। ফলে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে তিনি। মানিক মিয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থ কষ্টের কারণে ছেলেমেয়ে লেখাপড়ার ভরণ-পোষণ করাতে পানেনি। প্রতি বছর বিভিন্ন মৌসুমকে কেন্দ্র করে তাদের থাকে বাড়তি ব্যস্ততা। অর্ডার পেয়ে পাইকারদের চাহিদা অনুসারে পণ্য সরবরাহ করতে হয় বলে জানান তারা। শায়েস্তাগঞ্জের লাদিয়া গ্রামের আঙ্গুরা খাতুন (৩৫) বাঁশ দিয়েই মোড়া তৈরি করে সংসার চালান। মোড়া বিক্রি থেকে প্রতি মাসে আয় হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আঙ্গুরার স্বামী এ কাজে সহযোগীতা করেন। বাঁশ কিনে আনেন তিনি। জানালেন মোড়া তৈরির কৌশল। বাঁশ চিরে ১০-১২ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর শলা তৈরি করা হয়। শলার সুতলি প্লাস্টিক ও রিকশার অব্যবহৃত টায়ার দিয়ে তৈরি হয় ছোট মাঝারি ও বড় এ তিন ধরনের মোড়া। ছোট মোড়া ৮০, মাঝারি ১৩০ ও বড়টি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিটি মোড়া বিক্রি করলে লাভ থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জের পৌর শহরের এলাকার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বাইরা নলি ও মলি এ তিন ধরনের বাঁশ পাওয়া যায়। বাইরা দিয়েই বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরিতে সুবিধা বেশি। ডালা, কুলা, পালি, পানডালা ও মাছ ধরার ঝুড়ি বাইরাতেই সুবিধা। প্রতিটি ডালা ৪০, খাঁচা ৭০ ঝুড়ি ১০০ ও পানডালা ৮০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। কুলা ও পালির চাহিদা থেকে ১২ মাস। প্রতিটি কুলা ৯০ ও পালি ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। শায়েস্তাগঞ্জ থানার লাদিয়া গামের জনৈক ক্ষুদে বাঁশ কারিগর বলেন এটি একটি সম্ভাবনায় ক্ষুদ্র শিল্প। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা। শায়েস্তাগঞ্জের বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের বড় মোকাম বসে দাউদনগর বাজারের সংলগ্ম স্থানে। এ বাজারে সপ্তাহের শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসের বিক্রেতাদের সাথে কথা হয়, শায়েস্তাগঞ্জ থানার লাদিয়া গ্রামের জনৈক ক্ষুদে বাঁশ কারিগর বলেন এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র শিল্প। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা। শায়েস্তাগঞ্জে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের বড় মোকাম বসে দাউদনগর বাজার সংলগ্ম স্থানে। এ বাজারে সপ্তাহে শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাঁশের তৈরি পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। কথা হয় শায়েস্তাগঞ্জ থানার লাদিয়া গ্রামের আঙ্গুরা খাতুন (৭০) বয়সের ভারে প্রায় নুয়ে পড়লেও জীবিকার লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি বলেন দীর্ঘদিন ধরেই নিজের তৈরী কুলা, ডালা, ঝুড়ি বিক্রি করছি। তবে এখন আর আগের মত লাভ হয়না। সপ্তাহে দুই দিন হাট করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকম দিন কাটছে। তবে তার গ্রামের অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে বলে জানান।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]