রাকিবুল হাসান আকন্দ, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে গ্রামবাসীর পিটুনীতে সুলতান ডাকাত (৫৫) নিহত হয়েছে । বুধবার (০৩ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের বেড়াবাড়ী গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের বাড়িতে এ এ ঘটনা ঘটে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো: নাসিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সুলতান ডাকাত একই ইউনিয়নের সূর্য নারায়নপুর (নতুন বাজার) গ্রামের মৃত হাসু মুন্সির ছেলে। সে ইট-বালু (সাপ্লায়ার) ব্যবসায়ী ছিলেন এবং একই উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের শ^শুর বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেন (৪৫) জানান, রাত আনুমানকি দেড়টার দিকে ৪-৫ জনের একদল ডাকাত বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় ডাকাতেরা তার ছোট ভাই দানিছের ঘরের দরজার শিকল বাহির থেকে আটকিয়ে দেয়। শব্দ পেয়ে বাহিরে কে জিজ্ঞাসা করলে ডাকাতেরা তার বড় ভাইক বলে তুই ঘর থেকে বের হবে না। তোকে হত্যা করতে আসছি। এ কথা শুনে তার ছোট ভাই ডাক চিৎকার শুরু করলে ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। চিৎকার শুনে পাশের বাড়ি থেকে মোশারফের অপর ছোট ভাই সোহেল এসে দানিছের ঘরের দরজার শিকল খুলে দেয়। পরে তারা তিন ভাই মিলে ডাকাতদের ধাওয়া করলে পাশের ধান খেতে আটক করে। এসময় ডাকাতদের ধরতে চাইলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ডাকাতেরা তার দুই ছোট ভাই সোহেল (৩৩) ও দানিছকে (৪০) লোহার রড ও পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে। পরে দৌড়ে পালানোর সময় ডাকাত সুলতান উদ্দিনের পা ধান খেতের কাদায় আটকে গেলে তাকে আটক করে। পরে তাকে ধরে এনে বাড়ির পাশের সেগুন গাছে বেঁধে রাখে। সকালে খবর পেয়ে গ্রামবাসী ডাকাত সুলতানকে পিটিয়ে হত্যা করে। গুরুতর আহত সোহেল ও দানিছকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাথমিক চিকিৎসার পর গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী রীনা (৪২) জানান, রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তার স্বামী সুলতান উদ্দিনকে গজারিয়া গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মো: হিরণ মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়। পরে সকালে পাশের গোসিঙ্গা ইউনিয়নের বেড়াবাড়ী গ্রামে তাকে পিটিয়ে হত্যার খবর পেয়ে আমি থানায় গিয়ে লাশ সনাক্ত করি। তার স্বামী ইট-বালু (সাপ্লায়ার) ব্যবসা করতেন।
মোশারফ হোসেনের বড় বোন ফুল মেহের (৫০) জানান, ডাকাত দলের সাথে থাকা শহীদুল্লাহর কাছে এই এলাকার কোন এক ব্যাক্তির টাকা-পয়সার লেনদেন ছিল। ওই টাকা তার ছোট ভাই মোশারফ উঠিয়ে দিবে বলে কথা দেয়। ডাকাতদের কাছ থেকে কাটার, প্লাস, লোহার পাইপ এবং সুলতানের একটি মোবাইল পাওয়া গেছে। এগুলো পুলিশ জব্দ করে নিয়ে গেছে।
গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রাম্যান সাইদুর রহমান শাহীন জানান, ডাকাত আটকের খবর পেয়ে সকাল ৮টার দিকে বেড়াবাড়ী গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের বাড়ীতে যাই। পরে ওই বাড়ীর পাশের সেগুন গাছের সাথে সুলতান উদ্দিনকে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই। এসময় এখানে কেন আসছিলেন জিজ্ঞাসা করলে সে কোনো জবাব দেয়নি। তার সাথে একই ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের আতিকুল এবং পাশের চাওবন গ্রামের শহীদুল্লাহ ও আব্দুল বাতেন ছিল বলে স্বীকার করে। তবে সুলতান উদ্দিনকে এলাকাবাসী ডাকাত সুলতান নামেই চিনে এবং তার নামে পাশের কাপাসিয়া থানায় ডাকাতির মামলা রয়েছে বলেও জানান।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো: নাসিম জানান, গ্রামবাসীর পিটুনিতে নিহত সুলতান উদ্দিনের নামে ২০১৮ সালে পাশের কাপাসিয়া থানায় একটি ডাকাতি এবং মাদক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
০ views