গাজীপু প্রতিনিধি রাকিব হাসান আকন্দ দৈনিক শিরোমণিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে এক গৃহবধূর সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে টিউমার শনাক্ত হয়। ওই সময় পেট থেকে নবজাতক বের করে টিউমার রেখেই পেট সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। একাধিকবার আল্ট্রাসনোগ্রামে ওই টিউমার শনাক্ত হয়নি।অপারেশনের পর সেলাই করা স্থান শোকানোর পরিবর্তে সেখান দিয়ে পানি পড়ে তাতে পঁচন ধরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তার প্রাইভেট ক্লিনিক আল হেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন গৃহবধূ তৃণার (২৭) স্বামী নুরুল ইসলাম। তিনি এ ব্যাপারে গাজীপুরের সিভিল সার্জন, শ্রীপুর থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে সুবিচার চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন।অভিযোগের বিবরণ ও গৃহবধূর স্বামীর বক্তব্যে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারী থেকে তার স্ত্রী তৃণাকে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আয়েশা সিদ্দিকার তত্বাবধানে নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন। গৃহবধূর শারীরিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন সময় একাধিকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়। পরে গত ২৫ আগস্ট রাতে ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে ওই হাসপাতালেই সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। অপারেশনের সময় চিকিৎসকগণ গৃহবধূর পেটে আড়াই কেজি ওজনের টিউমার পাওয়া গেছে বলে গৃহবধূর স্বজনদের জানায়। অপারেশনের আগে একাধিকবার আল্ট্রাসনোগ্রামের পরও কেন টিউমার ধরা পড়েনি তা নিয়ে গৃহবধূর স্বজন ও হাসপাতালের লোকজন বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসকগণ পেটে টিউমার রেখে পেট সেলাই করে দেয়। কিন্তু সেলাই করা জায়গা দিয়ে অনবরত পানি বের হয়ে পঁচন ধরা, ঘা না শোকানো এবং উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দেওয়ায় বুকের দুধ কমে যাওয়ার বিষয়টি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আবুল হোসাইনকে জানানো হয়।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর “ঘা শোকানোর দায়ীত্ব নেয়নি” বলে জানিয়ে গৃহবধূর স্বামীকে হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ইচ্ছায় অপারেশনের আগে টিউমার শনাক্তের বিষয়টি গৃহবধূর স্বজনদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগে দাবী করা হয়েছে।এ ব্যাপারে ডা. আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, অপারেশনের সময় টিউমার শনাক্তের ঘটনাটি দেশে অসংখ্য ঘটছে। জরায়ুর পেছনে থাকায় টিউমারটি আল্ট্রাসনোগ্রামে ধরা পড়েনি। এমন কিছু টিউমার রয়েছে যেগুলো প্রথমদিকে ছোট হয় পরে শেষের দিকে খুব দ্রæত বড় হতে থাকে। এটিও তেমন একটি ঘটনা।এমন বিষয় কোনো চিকিৎসক ইচ্ছা করে গোপন করেন না। তাছাড়া অপারেশনেরসময় রোগীর স্বামী এবং স্বজনদের টিউমার শানক্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই সময় নবজাতক ভুমিষ্টের পাশাপাশি টিউমার অপারেশনটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় গৃহবধূর স্বামী এবং স্বজনদের পরামর্শে টিউমার রেখেই পেট সেলাই করে দেয়া হয়েছে। গৃহবধূর স্বামীকে এ বিষয়ে অনেকক্ষণ কাউন্সেলিং করা হয়েছে।আল হেরা হাসপাতালের বলবস্থাপনা পরিচালক ডা. আবুল হোসাইন সাংবাদিকদের হাসপাতালের কনসালটেন্ট ওই চিকিৎসকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন,এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। রোগীর স্বজনেরা ভুল বুঝেছেন।শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান,অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।ইতোমধ্যে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদীর সাথে কথা বলেছেন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করেছেন। অভিযুক্তদের সাথেও কথা বলা হবে।