গাজীপুর প্রতিনিধি রাকিব হাসান আকন্দ দৈনিক শিরোমণিঃ
সকাল থেকেই শ্রীপুরের বিভন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আনাগোণা শুরু হয়। শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ফুলের বিনিময়ে হ্যান্ড সেনিটাইজার স্প্রে,মাস্ক বিতরণ ও তাপমাত্রা পরীক্ষার মাধ্যমে বরণ করে নিতে দেখা গেছে। উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার মাওনা, কাওরাইদ, রাজাবাড়ী, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।সশরীরে পাঠদান অংশ নিতে পেরে উচ্ছসিত শিক্ষকরাও। তারা বলছেন, শিক্ষকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বোঝাপড়া। দীর্ঘদিন পর এটি
আবার শুরু হওয়ায় তারা খুবই আনন্দিত। দক্ষিন ভাংনাহাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ ইবনে মোবারক বলেন, দীর্ঘদিন পর সশরীরে পাঠদানে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়ার জন্য আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাস্ক পড়ার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।একই কথা বলেন শ্রীপুর পশ্চিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সিদ্দিকা আক্তার। তিনি বলেন, আজকের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।শিশুদের কোলাহলে আবার মুখরিত হয়ে উঠল প্রিয় প্রাঙ্গণ। শিক্ষার্থীদের মতো আমারও খুবই ভাল লাগছে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে এসেছে এ এক অন্যরকম অনুভূতি।পিয়ার আলাী কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নবীর হোসেন বলেন, আগে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে আজ রোববার নতুন বন্ধুদের সাথে নতুন একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠ গ্রহণ করতে এসেছি। এখানে শিক্ষক এবং বন্ধুসহ বেশিরভাগেরই নতুন মুখ। কলেজের প্রবেশমুখে তাপমাত্রা যন্ত্র দিয়ে পরিমাপ ও হ্যান্ড সেনিটাইজার স্প্রে করা হয়।সুলতান উদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীর পরিচালক সালাহ উদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ক্যাম্পাস, শ্রেণীকক্ষ এখন আগের রূপ ফিরে পেয়েছে। “যার যে কাজ সে কাজ না করতে পারলে মন তৃপ্ত হয় না। আমরা আবার আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে একাত্ম হয়ে পঠন-পাঠনে অংশ নিতে পারছি।একই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার আল্পনা, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম, অষ্টম শেণেীর শিক্ষার্থী মায়মুনা রহমান মিম জানান,করোনাকালীন পাঠ ছিল বাড়িতে এখন আবার ক্যাম্পাসে পাঠ শুরু হয়েছে। ভীষণ অঅন্দ লাগছে।শ্রীপুরের পৌরসভার মাস্টারবাড়ী (নতুন বাজার) এলাকার সুলতান উদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীতে করোনা পরবর্তী খোলার দিন রোববার করোনাকালীন গত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মাগফিরাতের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। সকালে শারীরিক ব্যায়মের পর স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আলোচনা এবং শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ
এলাকাবাসীদের দুপুরে খাবার পরিবেশন করা হয়।ছেলেকে স্কুলে দিতে এসেছিলেন গৃহিনী নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, ভাল লাগছে
অনেক দিন পর স্কুল খোলায়। কিন্তু, মনে এক ধরণের শঙ্কাও আছে। কারণ, যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয় তাহলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।সরকারের কাছে অনুরোধ যেন স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি রাখা হয়।না হলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অবস্থার মুখোমুখি আমাদেরও হতে হবে।কাওরাইদ ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মাসুদ রানা
জানান, শিক্ষার্থীদের উচ্ছাস, দেখা গেছে। স্কুলে আসতে পেরে তারা যেন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষার্থী আশিক জানায়,করোনার সময় বাসা থেকে বের হওয়া যাচ্ছিল না। এখন স্কুলল খুলে দিয়েছে।সহপাঠি বন্ধুদের সাথে দেখা হবে, আড্ডা হবে। সামনাসামনি বন্ধুদের দেখা পেয়ে খুবই ভাল লাগছে।শ্রীপুরের ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শম্পা রাণী দাস বলেন, বিদ্যালয়ের আঙ্গিণা এখন শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে ভরে উঠবে। তারা আগের মতো পড়াশোনা করবে। অভিভাবকেরাও নিশ্চিন্তে থাকবে শিশুরা এবার পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে।একসাথে স্কুলে আসবে এবং একসাথে খেলাধূলা করতে পারব। তবে সেগুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে।শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার জানায়, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রায় পাঁচ মাস চলে গেছে। নতুন প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে বসে পাঠ গ্রহণ করার অনেক ইচ্ছা ছিল। অবশেষে রোববার স্যারদের ক্লাশে অংশ নিয়ে সেই ইচ্ছা পুরণ হয়েছে।একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নূরুন্নবী আকন্দ বলেন, কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক। এ উপস্থিতি তাদের স্বতস্ফুর্ততার প্রমাণ দিয়েছে।কলেজ আঙ্গিণায় সকলের জন্য প্রধান দুটি গেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন, সাবান ও হ্যান্ড সেনিটাইজার সংরক্ষণ, মাস্ক বিতরণ এবং সচেতনতামূলক ব্যানার ফেস্টুন সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন কলেজ পুন: খোলার কার্যক্রম ঘুরে দেখেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তরিকুল ইসলাম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আমিন।শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তরিকুল ইসলাম জানান,শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিগণ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সে বিষয়টাকে গুরুত্ব দেওয়ার পরার্মশ দেওয়া হয়েছে। শ্রেণীকক্ষ পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থবিধি মানতে একজন শিক্ষার্থীকে চুল ছোট করে, ইউনিফর্ম নিয়মিত পরিধান করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।