রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
রাকিব হাসান আকন্দ, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :গাজীপুরের শ্রীপুরে কর্মরত শ্রমিকদেরকে জোর পূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া ও পুলিশ দিয়ে মারধরের প্রতিবাদে ওশিন স্পিনিং মিলস কারখানায় হামলা ও ভাংচুর করেছে শ্রমিকেরা। এসময় তাদের বাধা দেয়ায় ৪ জন নিরাপত্তা প্রহরী আহত হয়। শুক্রবার (১৬ জুন) বেলা ১১ টায় উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামে ওই কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
রিং সেকশনের শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, রাতের শিফটে আমরা কাজ করছিলাম। আনুমানিক ২ টায় এজিএম হােিফর নির্দেশে আমাদেরকে ফ্লোর থেকে তার টেবিলের সামনে ডেকে নেয়। পরে সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্য কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করে।
একই অভিযোগ করেন লাইনম্যান নুরু মিয়া। তিনি বলেন, রাতে কাজ করার সময় হঠাৎ আমাকে এজিএমের টেবিলে যেতে বলে। আমি টেবিলে গেলে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে আমাদেরকে হুমকি দেয়। এসময় আমিসহ রিং সেকশনের হেলিম, সজিব ৫জনকে লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়।
শ্রমিক হেলিম জানান, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে আমার কাছ থেকে এক হাজার এবং কারো কাছ থেকে ২ হাজার এরকমভাবে টাকা নিয়েছে। টাকা নেয়ার বিষয়টি কোনো শ্রমিক ফাউন্ডেশনের নেতারা জানলে তোদের খবর খারপ কইরালাম। তারা নিজের মুখে বলে আমরা ডিবি পুলিশ। তবে তারা আসলেই পুলিশ কি’না আমরা জানিনা। তারা আমাদেরকে সাদা কাগজে সই দিতে বলে। না দিলে মারধর করে। তখন বলে শুয়রের বাচ্চা সই কর।
তিনি আরো জানান, রাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশ নিয়ে আসে। পরে একজন একজন করে শ্রমিককে ডেকে প্রশাসন বিভাগে নিয়ে যায় এবং তাদেরকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর বা টিপসই দিতে বলে। স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাদেরকে চর-থাপ্পরসহ লাঠি দিয়ে মারধর করে।
নারী শ্রমিক লিজা আক্তার বলেন, প্রশাসন বিভাগে নিয়ে আমাদেরকে মারধর করে। পরে রাত তিনটার দিকে উপস্থিত লোকজন পুলিশ পরিচয়ে আমাদেরকে বের করে দেয়। যাদেরকে মারধর করেছে তাদের সাথে থাকা টাকা পয়সা রেখে সাদা কাগজে টিপসই রেখে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনাটি কারো সাথে শেয়ার এবং না বলার জন্য হুমকি দিয়ে দেয়। কারো বললে পরবর্তীতে অনকে সমস্য হবে বলে জানান তারা।
প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর নারী শ্রমিক জানান, পুলিশের কি কোনো অধিকার আছে নারীদের গায়ে হাত দেওয়া? তারা নারী শ্রমিকদের পাছায় ও পায়ে লাঠি দিয়ে মারধর করেছে। যে প্রতিবাদ করছে তাকেই পুলিশ মারধর করছে।
অন্যান্য শ্রমিকেরা জানান, আমরা বি শিফটে রাতে কাজ করার জন্য কারখানায় প্রবেশ করি। তখন জানতে পারি এ শিফটের বোনাস দিয়েছে। তখন আমরা ধারনা করছি ডিউটি শেষে আমাদের বোনাস দিবে। কিন্তু ১১ টা বেজে গেলেও বোনাস শে দেইনি। তখন কারাখানা কর্তৃপক্ষকে বোনাসের জন্য জিজ্ঞাসা করলে বলে তোমাদেরকে কয়েকদিন পর বোনাস দেওয়া হবে। পরে রাত আনুমানিক ১ টার দিকে পুলিশ নিয়ে আসে। পুলিশ জিজ্ঞাসা করে তামোদের নেতা কে? আমরা বলি আমাদের এখানে নেতা নাই। আমরা সবাই শ্রমিক। লাইনম্যান নূরু, আনোয়ার হোসেন, হেলিম, সজীব ও রাকিবুলকে ঘরে (প্রশাসন বিভাগে) নিয়ে যায়। এরপর সাদা কাগজে সই-স্বাক্ষর নেয়। বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলন করলে সমস্যা হবে বলে হুমকি দেয়। প্রতিবাদ করলে মারধর করে। শুক্রবার (১৬ জুন) সকালে আবার পুলিশ এলে শ্রমিকেরা ক্ষুব্দ হয়। এ সময় বেতন-ভাতা দাবী করলে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এরপর শ্রমিকেরা কারখানায় ভাংচুর করে।
ওশিন স্পিনিং মিলস কারখানার সহকারী মহা-ব্যবস্থাপন (এজিএম) আবু হানিফ বলেন, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) আমরা তাদের মে মাসের বেতন পরিশোদ করি। পরে তারা ঈদ বেনাসের দাবীতে কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে তারা প্রতিবাদ করে। পরে ওইদিন রাতেই তাদেরকে ঈদ বোনাস দিয়ে দেই। এরপর আবার তারা চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন দাবী করে। বি-শিফটের শ্রমিকরো ধারনা করেছিলো তাদের বেতন-ভাতা না দিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষনা করবে কর্তৃপক্ষ। পরে শুক্রবার (১৬ জুন) বেলা ১১ টারি দিকে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে কারখানায় ভাংচুর করে। এসময় বাধা দেয়ায় ৪ জন নিরাপত্তা প্রহরী আহত হয়। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের শ্রীপুর জোনের ইন্সপেক্টর আ স ম আব্দুন নূর বলেন, আমাদের কোনো পুলিশ সদস্য বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাতে ওশিন স্পিনিং মিলস কারখানায় যায়নি। শুক্রবার (১৬ জুন) কারখানায় হামলা ও ভাংচুরের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল ওই কারখানায় যাই। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো: নাসিম বলেন, আমাদের কোনো পুলিশ রাতে ওই কারখানায় যায়নি। ভাংচুরের খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে যাই। কয়েকজন শ্রমিককে শিল্প পুলিশ আটক করেছে। তবে তিনি সংখ্যা জানাতে পারেননি। কারখানায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সানোয়ার হোসেন বলেন, শিল্প কাখানার বিষয়টি শিল্প পুলিশ দেখে থাকে। আমাদের কোনো পুলিশ ওই কারখানায় যায়নি। শ্রমিকেরা যদি এ ঘটনায় শ্রমিকেরা থানায় অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে দেখব।