গাজীপুর প্রতিনিধি :রাকিব হাসান আকান্দ
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কাজী খান। প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে রোববার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
অপরদিকে, রোববার দুপুর ১টায় কেওয়া চন্নাপাড়া গ্রামে ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মহসিন তাঁর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে ফলাফল কারচুপির অভিযোগ করেন।
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কাজী খান বলেন, পৌরসভার বৈরাগীরচালা, কেওয়া পশ্চিম ও পূর্ব খন্ড, তুলা উন্নয়ন কেন্দ্র এবং গিলাচালা কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের মারধোর করে বের করে দেয়া হয়েছে। পরে প্রশাসনের সহায়তায় আবারও তাদেরকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ার পর পুনরায় বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারেরা ইভিএম মেশিনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর বুথে বসে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থক ও প্রশাসনের কেউ কেউ বোতাম চেপে ইচ্ছেমতো ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনে রিটার্ণিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। আওয়ামীলীগের অধীনে অনুষ্ঠিত কেবলমাত্র এ নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি ছিল। ইভিএম পদ্ধতিকে প্রহসন ও পাতানোর ভোট প্রক্রিয়া দাবী করে ভবিষ্যতে সকলকে ইভিএম পদ্ধতির আওতায় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আহবান করেন। নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করা না হলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে বিজয়ী হতো। এ নির্বাচন প্রত্যাখান করে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবী করছি।
তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট আহসান কবির বলেন, বার বার চাওয়ার পরও ইভিএম মেশিন থেকে প্রিন্ট করা ফলাফল তাদের সরবরাহ করা হয়নি। হাতে লেখা ও পেনড্রাইভ থেকে পূর্বেই প্রস্তুত করা ফলাফল প্রিন্ট দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল মোতালেব, প্রার্থীর মিডিয়াসেলের প্রধান নাহীন আহমেদ মোমতাজী, শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিকদলের মো. আফাজ উদ্দি ও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন।
৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মহসিন (পাঞ্জাবী) দুপুর ১টায় তাঁর নিজ বাড়িতে ভোটগ্রহণ ডিজিটাল এবং সুষ্ঠু হলেও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিবর্তিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবী করেন। নির্বাচনের পর তাঁর কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগও করেন তিনি।
তিনি বলেন, এক কেন্দ্রের ফলাফল দেয়া হয়েছে ডিজিটাল প্রিন্টের মাধ্যমে আরেক কেন্দ্রের ফলাফল দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট ফরমে হাতে লিখে, তাও আবার ভুল লেখা। ফলাফল প্রক্রিয়াকরণের আগে তাঁর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হছে। ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ফলাফলপত্রে তাঁর এজেন্টদের কাছ থেকে আগাম স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের পর ফলাফল যদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেয়া হতো তাহলে তাঁর পাঞ্জাবী প্রতীক বিজয়ী ঘোষণা করতে হত।
ফলাফল প্রকাশের পর শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁর নির্বাচনী কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ওই ঘটনায় চন্নাপাড়া গ্রামের মো. কবির হোসেনের স্ত্রী মোছা. পারভীনের ছেলে রোববার রাতেই শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এতে একই গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে শফিক, হাসেন আলীর ছেলে মজিবুর, নাজিম উদ্দিনের ছেলে আমিনুলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কমপক্ষে ৫জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, ঘটনা তদন্তে একজন উপ পরিদর্শককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনে রিটার্ণিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। ফলাফল হাতেই লিখে দেয়ার নিয়ম। তাছাড়া যখন তাঁর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে তখনই অভিযোগ করার দরকার ছিল। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৬ জানুয়ারী শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র পদে চতুর্থবার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান (নৌকা)। কাউন্সিলর পদে বিজয়ীরা হলেন- ১নং ওয়ার্ডে আহমাদুল কবির মন্ডল দারা (উট পাখি), ২নং ওয়ার্ডে মাসুদ প্রধান (পাঞ্জাবি), ৩নং ওয়ার্ডে সাহিদ সরকার (উট পাখি), ৪নং ওয়ার্ডে কামরুজ্জামান মন্ডল (উট পাখি), ৫নং ওয়ার্ডে রমিজ উদ্দিন সরকার (পানির বোতল), ৬নং ওয়ার্ডে হাজী কামাল মাহমুদ (উট পাখি), ৭নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ (পানির বোতল), ৮নং ওয়ার্ডে আলী আজগর বেপারী (পানির বোতল) এবং ৯নং ওয়ার্ডে আমজাদ হোসেন (পানির বোতল) বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সংরক্ষিত আসনে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে নাজমা বেগম (চশমা), ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে মমিনা বেগম বুলবুলি (চশমা) এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে আফরোজা আক্তার (চশমা) বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।