লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায় মানুষের দীর্ঘ লাইন। এদের বেশিরভাগই কাজের খোঁজে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করাতে এসেছেন। তবে সব কাগজপত্র পাওয়ার পরেও হয়তো আশাপূরণ হবে না অনেকের। কারণ গত এক বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ৩৬ শতাংশ মূল্যমান হারিয়েছে লাওতিয়ান মুদ্রা কিপ। পেট্রল সেখানে আরও দামি হয়ে উঠছে এবং দিনদিন তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। গত দেড় মাস যাবৎ গাড়ির ট্যাংকি ভরতে লাওতিয়ানদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেট্রল পাম্পগুলোর সামনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।এসব দৃশ্য স্পষ্টতই শ্রীলঙ্কার কথা মনে করিয়ে দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি চরম অর্থসংকটের মুখে গত মে মাসে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। ওষুধ, খাদ্য, জ্বালানি পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লঙ্কানদের। চলতি সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার সরকার জানিয়েছে, অন্তত আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত কেবল জরুরি পণ্য সরবরাহকারী গাড়িগুলোকে জ্বালানি দেওয়া হবে।লাওসের অবস্থা অবশ্য এতটা ভয়াবহ নয়। তবে শ্রীলঙ্কায় মহাসংকট ডেকে আনা অনেক লক্ষণই এখন লাওসেও দৃশ্যমান। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি অনেকদিন থেকেই পর্যটকশূন্যতায় ভুগছে, যার জন্য দায়ী করোনাভাইরাস মহামারি। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া এবং কিপের মূল্যমান হারানোয় জ্বালানি কেনার সক্ষমতা কমে যাওয়া পরিস্থিতি আরও গুরুতর করে তুলেছে। চলতি বছরে মে মাস পর্যন্ত লাওসে পেট্রলের দাম বেড়েছে অন্তত ৮০ শতাংশ; এপ্রিল মাসে ভোজ্যতেল, নুডুলসের মতো আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম ছিল গত বছরের তুলনায় অন্তত ১৯ শতাংশ বেশি।শ্রীলঙ্কার সঙ্গে লাওসের আরেকটি মিল হলো বাজে নীতি। ১৯৭৫ সাল থেকে টানা লাওসের ক্ষমতায় রয়েছে লাও পিপলস রেভোল্যুশনারি পার্টি। গত এক দশকে দেশটির বিশাল বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের খরচ জোগাতে গিয়ে তারা বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে নিয়ে গেছে, যা লাওসের মোট জিডিপির প্রায় ৮৮ শতাংশের সমান। এসব ঋণের অর্ধেকেই দিয়েছে প্রতিবেশী চীন।আগামী তিন বছরের মধ্যে লাওসের বার্ষিক কিস্তির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার। তারা এই বিপুল অর্থ কীভাবে শোধ করবে, সেটিই দেখার বিষয়। কিস্তির অংকটি দেশটির বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের প্রায় অর্ধেক এবং গত ডিসেম্বরে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সমান। এই অর্থ দিয়ে দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে লাওস।গত জুন মাসে ক্রেডিট-রেটিং সংস্থা মুডি’স লাওসের পয়েন্ট কমিয়ে সতর্ক করেছে, দেশটির দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।সম্ভাব্য অর্থনৈতিক দুদর্শা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লাও সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। রাজপথে না হলেও অনলাইনে ক্রমেই জনরোষ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত জুনে মন্ত্রিসভায় রদবদল এনেছে ক্ষমতাসীন দল। দুই উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদেও বসানো হয়েছে নতুন লোক।