মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ভাষা আন্দোলনের প্রায় ৬৯ বছর অতিক্রম হতে চলেছে। স্বাধীনতারও ৫০ বছর। কিন্তু দীর্ঘ এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও হবিগঞ্জ জেলা সদরে কোন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। যুগ যুগ ধরে সরকারি বৃন্দাবন কলেজের শহীদ মিনারই মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। অবশেষে এখন তৈরী হতে চলেছে বহু প্রতিক্ষিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। আর সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় তারও উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে কেন্দ্রীয় এ শহীদ মিনারটিও নির্মাণ করা হচ্ছে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্ত্বরে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দক্ষিণাংশে প্রায় ৫ শতাংশ জমির উপর এ শহীদ মিনারটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। প্রথমে টিআর, কাবিখা’র ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ মেলে। এ দিয়েই কাজ শুরু হয়। পরে জেলা প্রশাসক ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। সর্বশেষ কয়েকদিন পূর্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ১ দিনের বেতন দেয়া হয়। এমন উদ্যোগের খবরে একে একে এগিয়ে আসতে থাকেন বিভিন্ন ব্যক্তি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যে যার মতো করে এতে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ সহযোগিতা করেছে। সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও সহায়তা এসেছে। প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।প্রাচীন নাট্য সংগঠন খোয়াই থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন খাঁ জানান, জেলা সদরের আপামর জনতা সব সময়ই বৃন্দাবন সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরীর জন্য। ইতিপূর্বে একটি স্থান নির্ধারণও করা হয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে প্রশাসন থেকে একটি শহীদ মিনার তৈরী করছেন। তবে আমাদের দাবি ছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে না হয়ে যদি অন্য কোথাও হতো। একটি আবদ্ধ জায়গায় না থেকে অন্য অনেক স্থানেই অনেক খোলামেলা জায়গা আছে। যেখানে অনেক বেশি মানুষ জড়ো হতে পারে। আমরা দাবি জানাই সেসব খোলা জায়গায় যেন এটি হয়। তরুণ আইনজীবী শামীম আহমেদ জানান, ভাষা’র দাবি আদায়ের ৬৮ বছর পর একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরী হচ্ছে এটিই বড় কথা। তিনি বলেন, এখন আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে পরবো এতেই গর্বিত। সাংস্কৃতিক কর্মী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ যে হবিগঞ্জে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হচ্ছে। কিন্তু এটি যেখানে হচ্ছে তা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আশংকা যে এখানে সর্বসাধারণ শহীদ মিনারটি কতটুকু ব্যবহার করতে পারবে। আমরা মনে করি উন্মুক্ত স্থানে যদি একটি শহীদ মিনার হয় তবে সেটি অনেক বেশি সুন্দর ও অনেক বেশি কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতে পারে। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৭ দশক হয়ে গেছে। কিন্তু এ সময়েও এখানে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার গড়ে উঠেনি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। শহীদ মিনারে যদি একটি উন্মুক্ত মঞ্চ রাখা যেতো, তবে সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সে শহীদ মিনার এবং উন্মুক্ত মঞ্চকে কেন্দ্র করে হতে পারতো।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এখানে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকায় সকলের চাহিদার ভিত্তিতে সবার মতামত নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কোন প্রকার সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এটি নির্মিত হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন এ বছরই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন করা সম্ভব হবে
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]