রিপন মারমা রাঙ্গামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটির লংগদুতে সরিষার বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। আমন ও বোরো চাষের মধ্যবর্তী মাত্র ৩ মাস সময়ে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষার চাষ করে দারুন সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা। এবার উপজেলার প্রায় ২শ’ কৃষক ২০ হাজার শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছে।
প্রতি কানিতে খরচ বাদে ১৫ হাজার টাকার বেশি আয় করার আশা কৃষকের। যেখানে ধান চাষে খরচ তোলাই দায় সেখানে এক রকম বিনা খরচে সরিষা চাষ করে ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। তবে সরিষা ভাঙ্গানোর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ঘানি থাকলে কৃষিক আরো বেশি লাভবান হতো বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, আমন ধান তোলার পর জমিতে মই দিয়ে ফেলা হয় সরিষা বীজ। সাধারণত সরিষা চাষে তেমন কোন খরচ নেই। এবার লংগদুর কৃষি অফিস সরিষা চাষে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। প্রতিজন কৃষককে দুই কেজি বীজের সাথে এক বস্তা সার, স্প্রে মেশিন ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ দেয়া হয়। সেই বীজে দুই মাসের মাথায় ফসলে ফুল ফুটেছে। চলতি মাসের শেষের দিক থেকে ফসল তোলা শুরু হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার লংগদু সদর, আটারকছড়া সহ অন্যান্য ইউনিয়নে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। সারা উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার শতক জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এখানে মূলত বারি-১৮ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে বেশি। এই জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং খরচও হয়। প্রতি শতক জমিতে ৬ কেজি সরিষা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। প্রতি কানি জমিতে খরচ বাদে ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকবে বলে আশা কৃষকদের।
সরিষা গাছে ফুল আসায় মাঠগুলোতে এখন হলুদ রঙের নান্দনিকতা ছড়াচ্ছে। প্রকৃতির কোনও কন্যা যেন সেজেছে হলুদ বরণ বেশে। সবুজ পাহাড়ের বুক ছেয়ে গেছে হলুদ সরিষার শুভ্র হাসিতে। বাড়তি লাভ হওয়ায় আমন ধান উত্তোলনের পরে জমি ফেলে না রেখে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যাবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি সরিষা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আটারকছড়া এলাকার কৃষক জুমন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর বীজ, সার, কৃষি উপকরণসহ সব ধরণের খরচ দিয়েছে। আমরা এবার এক রকম ফ্রি-তে চাষাবাদ করেছি, ফলনও হয়েছে ভালো।
উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং সরিষার চাষ বাড়াতে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ওই পরিকল্পনার আওতায় কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সরিষা লাভজনক ফসল। কম শ্রমে কৃষকরা ভালো লাভ পান।
লংগদু কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী জানান, সরিষা একটি বাড়তি ফসল। আমরা বোনাস ফসলও বলতে পারি। লাভ বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই সরিষার চাষ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় এবার লংগদুর ২ শতাধিক কৃষকের মধ্যে সরিষা বীজ, সার ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করে। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সরিষা চাষাবাদ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ফসল ভালো হওয়ায় কৃষকেরা দারুন খুশি।
লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, পাহাড়ে সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। সামান্য পরিচর্যা আর অল্প খরচেই লাভ মিলছে ভালো। আমন ও বোরো ধানের মাঝামাঝি সময় হচ্ছে সরিষার চাষ। এ সরিষা তুলেই চাষিরা রোপণ করবেন বোরো। সরিষা বিক্রির টাকাতেই উঠে আসবে বোরো চাষের খরচ।