শফিউদ্দিন জানান, তাদের পিতা মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ফকিরের নামে পরিবারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ কমিটির কাছে বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ চান তারা। মৃত পিতার পৈতৃক জমিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা মাসুমদিয়া ইউনিয়নে জায়গা কেনেন। সেখানেই বীর নিবাসের বাড়ি বন্দোবস্ত দিয়েছে বরাদ্দ কমিটি। সরকারি ভালো বেতনে চাকরি করেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার ঘর কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইউএনও সাহেব বলতে পারবেন। বরাদ্দপ্রাপ্তির পর বাড়ি ভোগদখলে শফিউদ্দিনকে ক্ষমতা দিয়ে হলফনামা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ সময় আবুল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন বরাদ্দ দাবি করলে ইউএনও, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে প্রভাব খাটিয়ে বীর নিবাসের সত্ত্ব ছাড়তে লিখিত দলিল করে নেন প্রথম পক্ষের সন্তানেরা,এ অভিযোগ হালিমা খাতুনের। হালিমা খাতুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাড়ি প্রাপ্তিতে আমার অগ্রাধিকার রয়েছে। আমার নাবালিকা মেয়েও আছে। প্রথমপক্ষের ছেলেরা সরকারি চাকরি করে। তাদের অবস্থা ভালো। কিন্তু বাড়ি বরাদ্দের কথা শুনে আমি ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা আমাকে বরাদ্দ দেয়নি, শফির নামে বাড়ি বরাদ্দ হবে বলে জানায়। পরে, ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক করে আমার মেয়ের নামে এক লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে দলিলে সই করিয়ে নেয়। বাধ্য হয়েই তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে মেনে নিতে হয়েছে। রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম মোহন বলেন, উপজেলা কমিটির কাছ থেকে বীর নিবাসের বরাদ্দ নেওয়ার পর মৃত আবুল হোসেন ফকিরের প্রথমপক্ষের ছেলেদের সাথে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বিরোধ শুরু হয়। পরে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আমার পরিষদে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রীর নাবালিকা মেয়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত ও বিয়ের সময় সহযোগিতার শর্তে বীর নিবাসের মালিকানা প্রথমপক্ষের মেজো ছেলে শফিউদ্দিনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।শফিউদ্দিন বীর নিবাসের বরাদ্দ নেয়ায় অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াই অনিয়মের মধ্য দিয়ে গেছে ।কারণ, আবুল হোসেন ফকির মুক্তিযোদ্ধাই নন। তিনি ভারতেও প্রশিক্ষণে জাননি, কোনদিন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেও শুনিনি। অথচ এই সব পরিবারের লোকজন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা ভোগ করছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হচ্ছে। আমি এর বিপক্ষে। বীর নিবাস নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুলের পারিবারিক সালিশ শেষে দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রীর নিকট থেকে বীর নিবাসের দাবি না করার অঙ্গীকারনামা দলিল করে নেয়া হয়। সে দলিলে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দেন বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন ফকিরের বিধবা স্ত্রীর সাথে প্রথম পক্ষের সন্তানদের বীর নিবাস নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়। পরে, উভয়পক্ষ বসে বিষয়টি সমঝোতা করে নিয়েছে। বৈঠকে আমি অসচ্ছল, বিধবা স্ত্রীর অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু উভয়পক্ষ সমঝোতা করে স্ট্যাম্প করে। সেখানে সবার অনুরোধে আমি সাক্ষী হিসেবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আমার স্বাক্ষর দেয়া ঠিক হয়নি। আমি আসলে বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করিনি, সরল মনে স্বাক্ষর করেছি। সমাজসেবা কর্মকর্তার ক্ষমতা ব্যবহার করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাড়ী কেন নিতে হবে, আমার বোধগম্য হয় না। এটি লজ্জারও বিষয়।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বীর নিবাসের আবেদন যারা করেছিলেন, তাতে আবেদন কম ছিলো। আবার যারা আবেদন করেছিলো অনেকেরই প্রয়োজনীয় জমি নেই। আমার পরিবারে বীর নিবাস বরাদ্দ আমি একা দেই নি। কমিটি যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনিয়ম হয়নি বলে দাবি বরাদ্দ কমিটির সভাপতি, বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলীও। তিনি বলেন, কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শফিউদ্দিনের কোন নিজের বাড়ি নাই। অসচ্ছল হিসেবেই তাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা পরিবারের বীর নিবাস বরাদ্দ প্রাপ্তির সুযোগ নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।