শিরোমণি ডেস্ক : আদর্শিক বিরোধ থাকলেও 'অরাজনৈতিক' দাবিদার হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে সমর্থনকে রাজনীতির অংশ বলছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সমকালকে বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ এবং ইমান-আকিদার প্রশ্নে যে কর্মসূচি দেবে; জামায়াত তাতে সমর্থন করবে। অতীতেও করেছে।
হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শিক পার্থক্য রয়েছে, কর্মসূচিতে সমর্থন চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেরেন্দ্র মোদির সফরের বিরুদ্ধে হেফাজতের বিক্ষোভ ও হরতালে সহিংসতায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ সহিংসতায় বিএনপি ও জামায়াতের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হরতালকে নৈতিক সমর্থন জানালেও সহিংস তাণ্ডবের দায় অস্বীকার করেছে জামায়াত। হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, তাদের কর্মসূচিতে জামায়াত ছিল না।
গোলাম পরওয়ার সমকালকে বলেছেন, যে কোনো ঘটনায় জামায়াতকে দায়ী করা প্রধানমন্ত্রীর পুরোনো রাজনৈতিক অভ্যাস। তার অধীনে অনেক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তারা তদন্ত করে দেখুক কারা সহিংসতা করেছে। একটি ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত ছাড়াই জামায়াতকে দায়ীর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে। অতীতে এর বহু প্রমাণ রয়েছে।
হেফাজতের হরতালকে যৌক্তিক বললেও সমর্থন জানায়নি বিএনপি। অতীতে হেফাজতের কর্মসূচি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে দেখা গেছে দলটিকে। কিন্তু আদর্শিক মতপার্থক্য থাকার পরও জামায়াত সমর্থন দিচ্ছে। দলটির কর্মপরিষদের একজন সদস্য সমকালকে বলেছেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে দলই পথে নামবে, তাকেই সমর্থন করা হবে। ডান, বাম যে ঘরানার দলই সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর কর্মসূচি দেবে, জামায়াত তাতে সংহতি জানাবে। একই কারণে হেফাজতের কর্মসূচিতে সমর্থন, সহানুভূতি জানাচ্ছে।
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তিনটি ধারায় বিভক্ত। একটি ধারা ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারত থেকে চলে আসা জামায়াতে ইসলামী। এরা পরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জোরালোভাবে কাজ করে। আরেকটি ধারা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এবং এ ঘরানায় শিক্ষিত পীরদের নেতৃত্বাধীন। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, দুই খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বিভিন্ন উপদল, খেলাফত আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দল কওমি ঘরানার। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাদে বাকি দলগুলো এবং কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক আলেম-ওলামাদের নিয়ে গঠিত হেফাজত। তৃতীয় ধারাটি মাজারভিত্তিক। তরীকত ফেডারেশন এই ধারার অন্যতম দল। তারা জামায়াত ও কওমি ঘরানার অনুসারীদের বিরোধী।
জামায়াত ও কওমি ঘরানার দলগুলো আবার পরস্পরের বিরোধী। কওমি ধারার দল ও আলেমরা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়ে্যদ আবুল আলা মওদুদীর মতবাদকে ভ্রান্ত মনে করেন। এ মতপার্থক্য কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শাহ আহমদ শফীকেও জীবদ্দশায় এই প্রশ্নে জামায়াতের সমালোচনা করতে দেখা গেছে। জামায়াতের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ শক্তভাবে নাকচ করেছেন। তার মৃত্যুর পর জামায়াতের শীর্ষ নেতারা দাফন ও জানাজায় অংশ নিতে চট্টগ্রামে যান।
মিয়া গোলাম পরওয়ার সমকালকে বলেছেন, 'আল্লামা শাহ আহমদ শফী জামায়াতের সমালোচনায় যা কিছু বলেছেন, তা তার ব্যক্তিগত মতামত। অন্য ইসলামী দলের নেতারা জামায়াতের বিরুদ্ধে যা বলছেন, তাও তাদের ব্যক্তিগত অভিমত। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে জামায়াত কখনোই আলেম-ওলামা ও ইসলামী দলের বিরুদ্ধে বলেনি, ভবিষ্যতেও বলবে না। জামায়াত ঐক্য চায়।'
নানা ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব। তার প্রয়াত পিতা শায়খুল হাদিস আজিজুল হক দলের প্রতিষ্ঠাতা। এ দলটি ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোটে ছিল। জামায়াতের বিরোধিতা করে তারা জোট ছাড়ে। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয়। ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নসহ পাঁচ দফা চুক্তি করে। পরে সমালোচনার মুখে ওই চুক্তি বাতিল করে আওয়ামী লীগ। একাদশ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জোট থেকে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিল খেলাফত।
জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের এবং সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সম্পৃক্ততার কথা ২০১৩ সাল থেকেই শোনা যাচ্ছে তখন হেফাজত ১৩ দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে সংগঠনটি প্রথম আলোচনায় আসে। হেফাজতের সেই সময়কার দুই যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহি ও মুফতি মুহম্মদ ফয়জুল্লাহর সঙ্গে জামায়াত নেতাদের কথিত কথোপকথনের অডিও 'ফাঁস' হয়। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর এই দুই নেতা অভিযোগ তুলেছেন, হেফাজত জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বর্তমান আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ বর্তমান নেতৃত্ব জামায়াতপন্থি। আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীও একই অভিযোগ করেছেন।
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, কাউকে কোণঠাসা করতে জামায়াত-শিবির তকমা দেওয়া অনেক পুরোনো কৌশল। ক'দিন আগেও বলা হতো- হেফাজত নাকি সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। কিছু মিডিয়াও তা লিখত। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় থাকলে তো পাখির মতো গুলি করে হেফাজত কর্মীদের হত্যা করা হতো না।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]