সোমবার (১২ ডিসেম্বর ) সাভারের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতগুলো ঘুরে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভিড়।কেউ ভ্যানের উপর আবার কেউ ফুটপাতে রেখেই করছেন বেচা-বিক্রি। এসব দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। খুঁজছেন নিজের পছন্দের পোশাকটি। সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি ভিড় করছেন এসব দোকানে। তবে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যম আয়ের মানুষেরাও আসছেন এখানে কেনাকাটা করতে।
সাভার বাস স্টান্ড এলাকায় সর্বত্রই দেখা যায়, ফুটপাতের দোকানিরা কয়েকজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে ১শ টাকা, ৫০ টাকা বলে ডাক হাঁকছে। আবার কেউ অডিও সাউন্ড বাজিয়ে ১০০ টাকা, ১০০ টাকা বলে ডাকছে। এভাবে ডাকাডাকি শব্দে মুখরিত হচ্ছে সাভারের ফুটপাতগুলো।
এ সময় ফুটপাতে উলের টুপি, হাত মোজা,পা মোজা, মাফলার, সোয়েটার, কানটুপিসহ বাচ্চাদের নানা ধরনের শীতের কাপড়ের দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া কম্বল ও কোর্টের দোকানেও রয়েছে প্রচুর ভিড়।
কেউ দামাদামি পর্যন্ত সীমিত, আবার কেউ পছন্দ মত কিনে নিচ্ছেন শীতের পোশাকটি।
ভিড়ের ভেতর থেকে ভেসে আসে এক বয়স্ক লোকের কন্ঠস্বর- 'ফ্যাশনের দরকার নাই। ভারি সোয়েটার লাগবে। এসব হালকা-পাতলা সোয়েটারে শীত মানবে না।' সাভারের রাজ্জাক প্লাজারের সামনের ফুটপাতের এক হকারের কাছে এভাবেই নিজের চাহিদা তুলে ধরেন এক ক্রেতা। দোকানির নানান বিজ্ঞাপনকে পাত্তা না দিয়ে পছন্দের সোয়েটার খুঁজতে নিজেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন ক্রেতা। খুঁজেও বের করেন একটি। কিন্তু দোকানির কাছে দাম জিজ্ঞেস করে পরক্ষণেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই ক্রেতা। অস্বাভাবিক দাম হাঁকানোর অভিযোগ তুলে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। তবে অনেকটা অসহায়ের মতোই দোকানির চাওয়া দামেই কিনে নেন পছন্দের একটি সোয়েটার।
ফুটপাতে গরম কাপড়ের দাম নিয়ে কথা থাকলেও বিপণী বিতানগুলোর চেয়ে কম মূল্যে নিজেদের পছন্দসই গরম কাপড় ফুটপাত থেকে কিনতে পেরে দারুণ খুশি প্রান্তিক পর্যায়ের ক্রেতারা। তাদের মতে, মার্কেটে যে কাপড় পাওয়া যায়- একই কাপড় ফুটপাত থেকে তারা অর্ধেক মূল্যে কিনতে পারেন।
স্বল্প আয়ের ক্রেতা বারেক রহমান। পেশায় ভ্যান চালক। পরিবার নিয়ে থাকেন সাভারের শিমুলতলী এলাকায়। পরিবারের আবদার মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তার। এবার এসেছে শীত। সামর্থ্য না থাকলেও কিনতে হবে শীতের পোশাক।
বারেক রহমান বলেন, ‘রাস্তার পাশে ছাড়া আমাদের শীতের গরম পোশাক পরার সামর্থ্য নেই। তাই পরিবারের ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর জন্য কম দামে শীতের গরম কাপড় কিনতে ফুটপাতে এসেছি। ’
বৃদ্ধা ফারজানা খাতুন বলেন, ফুটপাতের দোকান হলো গরিবের শপিং মল। তাই আমরা গরিবেরা এ দোকানগুলো থেকে কাপড় কিনে পরিধান করি।
শীত যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রি তত বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
ফুটের দোকানদার জাকির হোসেন জানান, সপ্তাহ-দুয়েক আগে এসব পণ্যের বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। শুরুতে ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। তবে এখন মোটামুটি ক্রেতাদের বেশ ভিড়। অফিস শেষে সন্ধ্যায় আমাদের ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে।
সাভার নিউজ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও গরম পোশাক বিক্রি হচ্ছে রাস্তার ওপর ফুটপাতে। রাস্তা দখল করে এখানে কেন পোশাক বিক্রি করছেন জানতে চাইলে বিক্রেতা অনিক হোসেন বলেন, ‘কী আর করমু, শীতকালেও একটু ব্যবসা করতে দিবেন না?’ আলমগীরের কথা শুনে ক্রেতা সাব্বির ইসলাম বলেন, ‘আসলে আমরা ফুটপাত থেকে কাপড় কিনি বলেই তারা বসে। এখানে কিছুটা কম দামে কাপড় পাওয়া যায় বলেই কিনি।’
এদিকে সাভার ও আশুলিয়ার কয়েক শতাধিক ছোট-বড় কারখানা থাকায় শীত শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই কাপড় তৈরিতে ব্যাস্ততা বেড়ে যায়। মূলত এই মৌসুমে এসব কারখানায় জ্যাকেট, ট্রাউজার, টুপি ও স্যোয়েটারসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি হয়ে থাকে।
কারখানার শ্রমিকরা জানায়, শীত আসলেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। তাই তাদের নির্দিষ্ট সময়ের পরেও অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে শীত মৌসুমে তাদের পারিশ্রমিকও ওঠে দ্বিগুণ।