জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার বিষয়ে যশোরে ৭শ’ মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক বাড়িয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। অকারণে মন্দির খোলা না রাখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এদিকে শ্যামা পূজার ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে উৎসব বর্জনের নির্দেশনা এসেছে। থাকবে না আলোকসজ্জা, কর্মসূচি হবে অনাড়ম্বর।সম্প্রতি সরকার ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার অপচেষ্টা হিসেবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয় কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কর্মকান্ড চালিয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা চলে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। উস্কানীমূলক তথ্য ছড়িয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও বিশৃঙ্খলা তৈরির ঘটনায় যশোরের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরমধ্যে জেলার ৮ উপজেলার ৭শ’ মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে কমিটি গুলো। স্বেচ্ছাসেবক দলে সদস্য বাড়ানো হয়েছে। কুমিল্লার হুজুগের কোনো প্রভাব যাতে যশোরাঞ্চলে না পড়ে সে জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি মন্দির কমিটিগুলোও তৎপর রয়েছে। গত এক সপ্তাহ সেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। আগামি শ্যামা পূজা শুরু হয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার রাখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
আগামী ৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শ্যামা পূজা। প্রতি বছরই যশোরে মহা জাঁকজমকের সাথে এবং আলোকসজ্জায় আনন্দ হৈ হুল্লোড়ে এই পূজা উৎযাপন করা হলেও কুমিল্লার অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে এবার কেন্দ্র থেকে ৪টি নির্দেশনা এসেছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার সভাপতি অসীম কুন্ডু আমাদের প্রতিবেদক জেমস আব্দুর রহিম রানাকে জানিয়েছেন, আসন্ন শ্যামা পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এবারের পূজায় একাধিক দিনের বেশি পূজা পরিহার করতে হবে, কোন প্রকার উৎসব করা যাবে না, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ মিনিট কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে দর্শনার্থী ও ভক্তদের স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন করতে বলা হয়েছে, মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়াও সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে দিতে হবে। অনাকাঙ্খিত ঘটনার ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনী সার্বিকভাবে সতর্কাবস্থানে রয়েছে। এর পাশাপাশি মন্দির কমিটিগুলো নিজস্ব নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। সাধারণ সম্পাদক যোগেশ দত্ত জানিয়েছেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষে চালানো হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি চলছে যশোরে। পূজা পরিষদও নানা কর্মসূচি পালন করেছে। আপত্তিকর নানা পোস্ট শেয়ারের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও উস্কানীমূলক তথ্যের প্রেক্ষিতে যশোরে যাতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য মন্দিরে সেচ্ছাসেবক টিমের সদস্য বাড়িয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া অকারণে মন্দির খোলা না রাখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, সে দিকটিও দেখা হচ্ছে। এদিকে যশোর জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কর্মকান্ড চালিয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত চক্র শনাক্ত হয়েছে। ওই সব ঘটনায় জড়িত ও তাদের মদদদাতা ও উস্কানিদাতাদের খোঁজে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে ধমীয় প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে রয়েছে। যশোরের মন্দিরগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি রয়েছে গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর।যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, যশোরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পুলিশ এলার্ট রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যশোরের মন্দির মসজিদ মাদ্রাসায় যেনো গুজবের প্রভাব না পড়ে জোরালোভাবে সেই ভূমিকা নেয়া হচ্ছে।
৩ views