দেশে সারের দাম নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৫ দিন উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
আজ মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সার পরিস্থিতি নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ও সার ডিলারদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানান তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে সারের কোনো ঘাটতি নেই, পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এর পরও এক শ্রেণির অসাধু ডিলারের যোগসাজশের কারণে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছিল।
তিনি বলেন, কৃত্রিম ঘাটতি সৃষ্টি করে দাম বাড়ালে ডিলারদের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। বেশি দামে সার বিক্রি করলে ডিলার ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওযা হবে। এজন্য বৈঠক থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ১৫ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা সারের মজুদ পরিস্থিতি বিস্তারিত আলোচনা করলাম। কয়েকটি গণমাধ্যমে এসেছে, অনেক এলাকায় চাষিরা সার পাচ্ছেন না, প্রয়োজনীয় সারের ঘাটতি রয়েছে। সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে। আমরা যেটা দেখলাম, কোনো কোনো এলাকায় এলাকাভিত্তিক পরিবহন সমস্যার কারণে সারগুলো ঠিক মতো যায়নি। ডিলার ও দোকানদাররাও সুযোগটা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে এবং শিপিং কস্ট অস্বাভাবিক বেড়েছে।
কী এমন ঘটেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ইউরিয়ার দাম তিনগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা একটা আন্তর্জাতিক চক্র সুপরিকল্পিতভাবে সারের দাম বাড়িয়ে আমাদের শোষণ করছে। এই সুযোগ তারা নিচ্ছে। খুব সহজেই মানুষের মাঝে গুজবটি ছড়ায় যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এত বেশি কাজেই সারের দাম বাড়তেই পারে। চাষিরা মনে করেছে, কয়েকদিন পরে হয়তো সার পাওয়া যাবে না তাই তারা আতঙ্কিত হয়ে কিনেছে। এমনিতেও সার্বক্ষণিকভাবে আমরা পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। আমাদের মাঠ কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেওয়া আছে, তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে থাকে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের একদম ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা পর্যায়ের তারা যেন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে। যেসব ডিলার ও বিক্রেতা বেশি দামে বিক্রি করবে তাদের তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা একদম চিঠি দিয়ে ডিসি-এসপির সহযোগিতা নিয়ে অব্যাহতভাবে ১৫ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো সারের জন্য। অসাধু ডিলার ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত ইউরিয়ার লক্ষ্যমাত্রা হলো ২৬ লাখ মেট্রিক টন। জুলাই মাসে আমাদের মজুদ ছিল ৭ দশমিক ৬৯ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে আমাদের মজুদ আছে ৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর এটা ছিল ৯ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। মজুদ গত বছরে এই সময়ে যা ছিল তার চেয়ে কম। এটা আমাদের বোরো মৌসুম। এ সময়েই সারের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। আমরা এটুকু বলতে পারি, আমরা সতর্ক ছিলাম। মজুদ পরিস্থিতিতে মোটেই বিপর্যয় ঘটেনি। আমরা যেভাবে প্ল্যান করেছিলাম সেভাবেই এগুচ্ছি।
বৈঠকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেজবাহুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।