নিজস্ব প্রতিবেদক
ইতালির সিজনাল ভিসার ক্ষেত্রে কালো তালিকায় থাকা বাংলাদেশিরা আবারো দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে সিজনাল ভিসায় কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
চলতি মাসের ১৩ তারিখ থেকে শুরু করে এ বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এ তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ২৪টি দেশের নাম রয়েছে।
সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা যায়, করোনার পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে ইতালি বিভিন্ন খাতের জন্য বিদেশ থেকে ৩০ হাজার ৮৫০ জন শ্রমিক আমদানি করবে। এরমধ্যে ১২ হাজার ৮৫০ জন শ্রমিককে স্থায়ীভাবে আর ১৮ হাজার শ্রমিককে খন্ডকালীন মেয়াদে দেশটিতে কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ইতালিয়ান সরকার তাদের সিজনাল ও নন-সিজনাল ওয়ার্কার্স কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর আগে ইতালিয়ান সরকার এই সুযোগটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এর কারণ ছিল, বাংলাদেশি খামার শ্রমিকরা প্রতি মৌসুমে দেশে ফেরত না এসে এই প্রোগ্রামের শর্ত লঙ্ঘন করেছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবছর রোম সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সিজনাল ও নন-সিজনাল ওয়ার্কার্স প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেন। ইতালি সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এই সুবিধা দিয়েছে।
খণ্ডকালীন ভিসায় এসে চুক্তি অনুযায়ী ফেরত না যাওয়াসহ নানা কেলেঙ্কারিতে ২০১২ সাল থেকে কালো তালিকাভুক্ত ছিল বাংলাদেশ। পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে ইতালির দফায় দফায় কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘ আট বছর পর কালো তালিকা থেকে বাদ পড়ে বাংলাদেশের নাম।
এ তালিকায় বাংলাদেশের সাথে আরও রয়েছে আলবানিয়া, আলজেরিয়া, ভারত, বসনিয়া, ফিলিপাইন, মিসর, কোরিয়া, ইথোপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, জাপান, মালি, মলদোভা, মরক্কো, কসভো, মন্তেনেগ্রো, পাকিস্তান, মাচেদোনিয়া, সেনেগাল, সার্ভিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তিউনিশিয়া ও ইউক্রেনের নাম।
তবে এ বছরেও যেন পুরনো কলংকের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে নজর রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ইতালিস্থ বাঙালি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দরা। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশের সাথে ইতালির কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো হওয়ায় আট বছর পর আবারো ইতালি বাংলাদেশিদের দেশটিতে বৈধভাবে আসার সুযোগ দিয়েছে। তবে এবারো যদি বাংলাদেশিরা সিজনাল ভিসায় দেশটিতে এসে চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হলে ফিরে না যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে আবারো কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বাংলাদেশ।
এবিষয়ে অভিবাসন বিষয়ে অভিজ্ঞরা বলছেন, বিগত দিনে বাংলাদেশিরা সিজনাল ভিসায় ইতালি এসে শতকরা ৯৮ শতাংশ বাঙালি শ্রমিক চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ফিরে না যাওয়ায় ২০১২ সাল থেকে সিজনাল ভিসার গেজেটে কালো তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ। তবে দীর্ঘ আট বছর পর এবছর কালো তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় বাংলাদেশের নাম। তাই এ বছরেও যেন পুরনো সেই ঘটনা নতুন করে যে আর না ঘটে সে জন্য বাংলাদেশকে কঠোর সজাগ থাকতে হবে। এমন ঘটনার আবারো ঘটলে ইতালি সরকার আবারো কঠোর হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।
তবে এ ঘটনার জন্য অবশ্যই বাংলাদেশের দালালদের দায়ী করছেন এসব অভিবাসন পরামর্শকেরা। তারা বলছেন, এসব সিজনাল ভিসায় একজন কর্মীর ইতালির যেতে অল্পকিছু টাকা লাগলেও মাঝখানের দালালরা এসব ভিসা চড়া দামে বিক্রি করে থাকে শ্রমিকদের কাছে। তাই এসব শ্রমিকেরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভিসার মূল্যের সমপরিমান টাকা উঠাতে না পেরে তারা দেশটিতে অবৈধভাবে থেকে যায়। তাই সরকারের এসব দালালদের ধরে শাস্তির আওতায় আনা।
সিজনাল ভিসায় একজন কর্মী ইতালিতে গিয়ে নয় মাস বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। পরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে নিজ দেশে ফেরত যেতে হয়। পরবর্তী বছরেও সিজনাল ভিসায় তারাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশটিতে যেতে পারে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]